রংপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হামলা, দুই দিনেও মামলা হয়নি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার দুই দিন পার হলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি।

এই ঘটনায় এখনও কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি।

শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত দফায় দফায় এই হামলার পর মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও মানুষজনের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা ফের হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন।

তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে এবং হামলার পুনরাবৃত্তির কোনো আশঙ্কা নেই।

হামলার পর অনেক পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যায়। মঙ্গলবার সকালে কিছু মানুষকে বাড়িতে ফিরে আসতে দেখা গেছে এবং তারা ঘরবাড়ি মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মামলা প্রসঙ্গে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান জানান, “আমরা পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তারা একটি অভিযোগ দেবে। অভিযোগ পেলেই মামলা নথিভুক্ত করা হবে।”

কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পাশের উপজেলার (নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ) লোকজন এসে হামলা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। যারা দায়ী, তাদেরই মামলার আসামি করা হবে।”

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে টিন, বাঁশ-কাঠ ও মিস্ত্রি দিয়ে বাড়িঘর মেরামতের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদারকি করেছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মৃধা।

তিনি বলেন, “মামলার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন দেখছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এটি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা তাদের সব ধরনের সহায়তা করছি।”

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শনিবার গ্রামের এক কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় পাশের এলাকা থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে গ্রামে প্রবেশ করে এবং হামলা চালায়।

শনিবার রাত ও রোববার বিকেলে ওই কিশোরের বাড়িসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িগুলোতে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার পর সোমবার আতঙ্কে অনেকে এলাকা ছেড়ে যান। মঙ্গলবার থেকে কেউ কেউ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন, তবে এখনও পুরো এলাকায় আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।