বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেন দ্রুত দেশে ফিরে নেতৃত্ব দিতে পারেন, সে প্রার্থনা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার উত্তরা আজমপুরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার উপরে যে আস্থা রেখেছিল জনগণ, একইভাবে আজকে তারা তারেক রহমান সাহেবের উপর আস্থা রাখছে। অপেক্ষা করছি, কবে তারেক রহমান সাহেব দেশে আসবেন, কবে নেতৃত্ব দেবেন।
“আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যে তারেক রহমান সাহেব অতি দ্রুত দেশে আসেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন, সেটাই আমাদের কামনা।”
২০০৭-০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পরিবারসহ লন্ডনে যান এবং আর দেশে ফেরেননি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে গেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর থেকে তিনি লন্ডন থেকে ভিডিও কলে দল পরিচালনা করছেন। আর দেশে দল টিকিয়ে রেখেছেন মির্জা ফখরুলসহ জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। তখন তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ১৭ বছর পর দেশে ফিরলেও তারেক রহমান আসেননি।
বিএনপি নেতারা বারবার বলে আসছেন, তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর জটিলতা কাটলেই তিনি দেশে ফিরবেন। এসব মামলায় সাম্প্রতিক সময়ে সাজা থেকে মুক্তি পেলেও তার ফেরা নিয়ে বিএনপি এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারছে না।
শুক্রবারের সমাবেশে ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব প্রতিদিন কথা বলছেন, মিটিং করছেন। তিনি বলেছেন, আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব, যেখানে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, ভোটাধিকার থাকবে। সাধারণ গরিব মানুষ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।”
তিনি আরও জানান, তারেক রহমান প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘ফার্মাস কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ও ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালুর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
ঢাকার উত্তরা আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সের সামনে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ স্মরণে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
‘নির্বাচনটা আমরা চাই’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়। দেশের মানুষ একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়।
“আমার তো যাওয়ারই জায়গা নাই। এখন আমার কোনো সমস্যা হলে আমি কার কাছে যাব? কোনো এমপি নাইতো। তাহলে আমি যাব কার কাছে? আমার সমস্যাটা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নাই। এইজন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার।”
তিনি বলেন, “আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে অনেকের অনেক কথা আছে। ভুল-ত্রুটি, অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও আমরা আশা করেছিলাম এক বছরের মধ্যে শহীদদের তালিকা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। দুর্ভাগ্যবশত তা পুরোটা হয়নি, তবে চেষ্টা চলছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই যে সংস্কারের বৈঠক শেষ হয়েছে, আমরা আশা করছি, দুয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “যারা লুটপাট করে, ব্যাংক লুট করে, চাঁদাবাজি করে, মানুষের সম্পত্তি দখল করে নেয়, তাদের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। তাদেরকে কখনোই স্বীকৃতি দেওয়া হবে না।”
এক বছর আগে উত্তরায় গণঅভ্যুত্থানের সময়কার শহীদদের স্মরণ করে ফখরুল শহীদ পরিবারের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সাইফুল আলম নীরব, হাসান জাফির তুহিন, নুরুল ইসলাম নয়ন, রাজিব আহসান, সুলতানা আহমেদ, হেলাল খান, আবুল কালাম আজাদ, মোস্তফা জামান, এসএম জাহাঙ্গীর এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা।