জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’। ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের ঐ প্ল্যাটফর্ম মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০৪৩ সাল পর্যন্ত নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এক ‘পশ্চাৎপদ’ পদক্ষেপ এবং গভীর হতাশাজনক।
গত ৩১ জুলাই রাষ্ট্র সংস্কারের ১৯টি মূল বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ঘোষণা করা হলেও নারীর আসন বৃদ্ধির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভিন্নমত (‘নোট অব ডিসেন্ট’) এসেছে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিনের নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন আন্দোলন ও দাবি অবহেলিত হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে এমন পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্তে সম্মত হলো, তা নিয়ে গভীর বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ১০০টি নারী আসনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সরাসরি ভোটের পক্ষে থাকলেও জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বরাদ্দের পক্ষে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বিদ্যমান পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন ১৪ জুলাই সংশোধিত প্রস্তাবে কোনো দল ২৫টির বেশি আসনে মনোনয়ন দিলে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী দেয়ার শর্ত রাখলেও অধিকাংশ দল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
২৭ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন, যা পরবর্তীতে চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ১০ শতাংশে উন্নীত হয়।
৩০ জুলাই কমিশন নতুন প্রস্তাবে সংরক্ষিত ৫০ আসন বহাল রেখে প্রতিটি দল আগামী নির্বাচনে ৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ধাপে ধাপে এই হার প্রতি নির্বাচনে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১০০ আসনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির মূল দাবি হলো—
- জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে নারী-পুরুষ উভয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, সঙ্গে থাকবে সংরক্ষিত নারী আসন।
- সংসদে মোট আসন সংখ্যা হবে ৪৫০, যার মধ্যে ৩০০ সাধারণ ও ১৫০ সংরক্ষিত নারী আসন।
- সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের প্রথা বাতিল করে সরাসরি নির্বাচনী এলাকার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- এ ব্যবস্থা ২ থেকে ৩ মেয়াদের জন্য কার্যকর থাকবে।
কমিটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।