দাবিদাওয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান।
তিনি বলেন, “পুলিশ তাদের ওপর নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করে, টিয়ারগ্যাস ছুড়ে মারে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।”
বুধবার পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনার পর শাহবাগে অবস্থান নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান উপাচার্য বোরহান। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে তিনি জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
উপাচার্য বলেন, “আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন। এ শিক্ষার্থীদের যতটুকু সম্ভব অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেছি। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।”
তিনি জানান, বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হাসিব চৌধুরীসহ শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে উপাচার্য কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ তুলতেই শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। তখন উপাচার্য বলেন, “আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকেই ভুয়া বলেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই। কমিটির ব্যাপারে কোনো ধরনের বক্তব্য যদি থাকে…। এ মুহূর্তে দুইজন উপদেষ্টা রেলভবনে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের আমরা অনুরোধ করেছি যাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যথাযথভাবে বসে সমাধানের ব্যবস্থা নেন ও যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করেন।”
তিন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো—
- নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা।
- দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারে, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও আবেদন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।
- কেবল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্নকারীরাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) উপাধি ব্যবহার করতে পারে।
এ দাবিদাওয়া নিয়ে কয়েকদিন ধরে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করার পর ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তারা সড়ক ছাড়েন।
এর অংশ হিসেবে বুধবার সকাল ১১টার দিকে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেন। দুপুর দেড়টার দিকে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন। পথে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা সামনে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় ব্রিফিংয়ে পুলিশের হামলার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমা চাওয়াসহ পাঁচ দাবিতে শাহবাগে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।