সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ

সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তার স্ত্রী ও ছেলের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ায় তাদের পৃথকভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

বুধবার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজ্জাকসহ পরিবারের দুই সদস্যের সম্পদের বিষয়ে সম্প্রতি অনুসন্ধান চালায় দুদক। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্জাকের নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলে মোট ৬ কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর বিপরীতে বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৬ টাকা। ফলে তার নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৪ টাকা।

অনুসন্ধানে উল্লেখ করা হয়, রেকর্ডপত্র ও জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সম্পদের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন। এছাড়া আয়কর রিটার্নেও প্রায় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সম্পদের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার বানুর নামে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ৫১১ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। একই সময়ে তার পারিবারিক ব্যয় ছিল ৫১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১ টাকা। সবমিলিয়ে মোট সম্পদ দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০২ টাকা। কিন্তু বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে মাত্র ২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬১২ টাকা। ফলে তার বিরুদ্ধে ৯০ লাখ ৭১ হাজার ৮৯০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ করবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অন্যান্য উৎস থেকে ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৮৮২ টাকা এবং সিকিউরিটি মুনাফা বাবদ ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯০ টাকার তথ্য রয়েছে।

এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রীর ছেলে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের নামে ১ কোটি ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮২ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যয়সহ সবমিলিয়ে তার মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৩ টাকা। তবে বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে মাত্র ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ টাকা। এর ফলে তার বিরুদ্ধে ৫১ লাখ ১২ হাজার ১০০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ উঠেছে।

দুদকের মতে, রাজ্জাকের পরিবারের সদস্যদের এসব সম্পদ বৈধ আয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারার অধীনে রাজ্জাক, তার স্ত্রী শিরিন এবং ছেলে সুমিতের কাছে সম্পদ বিবরণী নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের অন্য নেতা ও মন্ত্রীদের মতো সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজ্জাকও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। গত ১৪ অক্টোবর রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

সরকারি কর্মকর্তা থেকে রাজনীতিতে আসা আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। নবম সংসদ নির্বাচনের পর তিনি খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন।