আগস্টে গণপিটুনি, সাংবাদিক নির্যাতন ও সহিংসতা বেড়ে : এমএসএফ

দেশে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। আগস্ট মাসে অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যা জুলাইয়ের ৫১টির তুলনায় কিছুটা কম। এই ঘটনায় আগস্টে ২৩ জন নিহত ও ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জুলাইয়ে নিহত ছিলো ১৬ জন।

মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) আগস্ট মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গণপিটুনিতে নিহতদের মধ্যে ১০ জনকে চুরির অভিযোগে, ৪ জনকে সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ৩ জনকে ডাকাতির অভিযোগে, ১ নারীসহ ২ জনকে পূর্বশত্রুতার জেরে, ১ জন মাদক মামলার অভিযুক্ত, ২ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে এবং ১ জনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, আগস্টে গণপিটুনির যে ঘটনা প্রকাশ করা হয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি ঘটেছে। মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতির মুখে।


সাংবাদিক নির্যাতন
আগস্টে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ জন সাংবাদিক হামলা, হুমকি, আইনি হয়রানি, নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত সাংবাদিকের সংখ্যা জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। নির্যাতনের ঘটনা জুলাইয়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

এমএসএফ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ১ জন হত্যা ও ৩৬ জন আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন। এছাড়া ২৩ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন, ১৬ জন লাঞ্ছনা ও হুমকির শিকার এবং ২০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা রয়েছে, যেমন হত্যা, চাঁদাবাজি ও মানহানি।

আগস্টে সাংবাদিক নির্যাতনের ৩৩টি ঘটনায় ৭টি বিএনপি, ৬টি পুলিশ, ৩টি শিক্ষক, ৫টি সন্ত্রাসী বাহিনী, ২টি চোরাকারবারি, ১টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ১টি এনজিও, ১টি পেশকার, ৪টি দুষ্কৃতকারী, ১টি পত্রিকা অফিস এবং ২টি সাময়িক কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল।

৭ আগস্ট গাজীপুরে পূর্বশত্রুতার জেরে দৈনিক প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) প্রকাশ্যে হত্যা হন। এমএসএফের সাইদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ণের কোনো প্রতিকার নেই।


রাজনৈতিক সহিংসতা
আগস্টে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় ৫৪৯ জন শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত। আহতদের মধ্যে ৪ জন গুলিবিদ্ধ। নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সহিংসতার মধ্যে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিকাণ্ড ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

সহিংসতার ৩৮টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে ২৩টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৫টি, এনসিপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বে ২টি, বিএনপি-এনসিপি দ্বন্দ্বে ১টি, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে ২টি, আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষে ১টি, আওয়ামী লীগ-গণপরিষদ ১টি এবং জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের সংঘর্ষ ২টি, গণ অধিকার পরিষদ–পুলিশ সংঘর্ষ ১টি ঘটেছে।


কারা হেফাজতে মৃত্যু
আগস্টে কারা হেফাজতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন কয়েদি এবং ৭ জন হাজতি। মৃতদের মধ্যে কেরানীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, নড়াইল, রাজশাহী, রাঙামাটি ও শরীয়তপুরের কারাগারে মৃত্যু হয়েছে।


সংখ্যালঘু নির্যাতন
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। আগস্টে ১০টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট ২টি, ধর্ষণ ১টি, জমি দখলের ঘটনা ১টি, গুজব ১টি এবং কটূক্তির কারণে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


নারী ও শিশু নির্যাতন
আগস্টে ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের ঘটনা ৪৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। ধর্ষণের শিকার ৯ জন প্রতিবন্ধী, ১১ জন শিশু ও ১৭ জন কিশোরী। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৬ জন কিশোরী ও ৯ জন নারী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ২ জন শিশু ও ১ জন কিশোরী। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ২৪টি, যৌন হয়রানি ২১টি ও শারীরিক নির্যাতন ৯৪টি ঘটেছে।