জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নিয়ে ওঠা ১৬ অভিযোগ তুলে ধরে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’।
সোমবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, “স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে নির্বাচনটি পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। একই কারণে আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করি এবং মনে করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এইসব কারসাজি উন্মোচন হওয়া জরুরি।”
৩৩ বছর পর গত বৃহস্পতিবার জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নানা নাটকীয়তা শেষে শনিবার সন্ধ্যায় ফল ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, “শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর এই নির্বাচন ভীষণ আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। কিন্তু বাস্তবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি একদিকে যেমন ছিল ত্রুটিপূর্ণ, তেমনই বিতর্কিত। অব্যবস্থাপনায় ভরা নির্বাচনটির এই প্রক্রিয়ায় মাশুল গুনতে হয়েছে আমাদের একজন তরুণ শিক্ষককে তার জীবন দিয়ে।”
বিবৃতিতে উল্লেখিত অভিযোগগুলো হলো—
- ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট।
- ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনের চার দিন আগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। উচ্চতর আদালত স্থগিতাদেশ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আপিলে গিয়ে তা স্থগিত করে।
- ৯ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের দিন ঠিক করা হলেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান অস্পষ্ট হয়।
- নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠানোর অভিযোগ।
- পোলিং এজেন্ট রাখার ক্ষেত্রে বৈষম্য, দেরিতে ঘোষণা ও পরিচয়পত্র বিতরণে গড়িমসি।
- ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রবেশে বাধা, ছাত্রীদের হল পরিদর্শনে প্রার্থী ও সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া।
- নির্ধারিত ভোটারের চাইতে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ; কোনো কোনো হলে মাটিতে ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়।
- অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়া।
- ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় অনেক বৈধ শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারেনি; জাল ভোটের প্রমাণ।
- কিছু হলে একাধিক প্রার্থীর নাম ছাপা না হওয়া বা ভোট নির্দেশনায় ভুল অঙ্ক।
- নির্ধারিত সময়ে সব হলে ভোট শেষ না হওয়া; আড়াই ঘণ্টা পরেও ভোট গ্রহণ চলা।
- ওএমআর গণনায় প্রশ্ন ওঠার পর হাতে গণনার সিদ্ধান্ত হলেও তা সঠিকভাবে অনুসরণ না করা; এতে ৪৮ ঘণ্টা পর ফলাফল ঘোষণা এবং ব্যালট বাক্স নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন।
- নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ৩ জন শিক্ষক অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়ানো।
- দুপুরের পর অংশগ্রহণকারী ৮ প্যানেলের মধ্যে ৫ প্যানেলের নির্বাচন বর্জন।
- ক্যাম্পাসে খাবার ও চায়ের দোকান বন্ধ রাখা; দুপুরের পর জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিভিন্ন গেটে জড়ো হয়ে মানসিক চাপ প্রয়োগের অভিযোগ।
- ৫ নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে ২ জন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে পদত্যাগ করেন; এরপরও ৩ জন কমিশনারের স্বাক্ষরে ফল ঘোষণা।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, “এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে যেকোনো প্রকারে একটি দলকে জিতিয়ে আনার লক্ষ্যে সমস্ত মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী, রিটার্নিং অফিসার এবং নির্বাচন কমিশনারদের বর্জন, পদত্যাগ ও সমস্ত অভিযোগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। দুজন কমিশন সদস্যের পদত্যাগকে আমরা নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনের সর্বাত্মক ব্যর্থতা হিসেবে দেখি।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “নির্বাচনের প্রাক্কালে ওএমআর যন্ত্রের দরপত্র বিষয়ক অভিযোগ ওঠে। একাধিক দল পরস্পরকে দোষারোপ করে। প্রশাসন সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে ওএমআর ব্যবহার না করে সনাতনী ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে গণনা শুরু করে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রশাসনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। বিপুল টাকা লগ্নির পর যন্ত্র ব্যবহার করতে না-পারা নিছকই লজ্জাজনক। এতে সহকর্মীদের ওপর অকথ্য পরিশ্রম চাপানো হয়েছে। তখনই প্রশাসনের তাৎক্ষণিক জনবল বৃদ্ধি জরুরি ছিল।”