স্বতন্ত্র কাঠামোর দাবিতে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ নিয়ে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসা সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা এবার নিজেদের ‘স্বতন্ত্র কাঠামো’ বজায় রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। এ দাবিতে তারা এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিলে মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশানের পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) এ কে এম মইনুদ্দিন বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদেরকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।” প্রথমে সরে যেতে রাজি না হলেও এক ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে দাঁড়ান।

আন্দোলনে থাকা এক শিক্ষার্থী জানান, দাবি পূরণ না হলে তারা আগের মত কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

‘বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের’ অন্যতম সংগঠক ২০১৫-১৬ সেশনের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাবেদ ইকবাল বলেন, তিতুমীরের স্বতন্ত্র কাঠামো বজায়ে রাখা, তিতুমীরে এইচএসসি যুক্ত না করা এবং আসন সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এক ঘণ্টার ‘ব্লকেড’ পালন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “সরকার আশ্বাস দিলেও আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়নি, বরং এখন তিতুমীরে এইচএসসি যুক্ত করার আলোচনা শোনা যাচ্ছে। তিতুমীরেতো কখনো এইচএসসি ছিল না, তাহলে এখন কেন এ বিষয়টি আসবে?”

অবরোধ চলাকালে ট্রাফিক পুলিশের গুলশান বিভাগ ফেসবুক পোস্টে জানায়, শিক্ষার্থীরা রাস্তার উভয় দিক বন্ধ করে দেওয়ায় গুলশান ১ থেকে আমতলী -জাহাঙ্গীর গেট/মহাখালীর দিকে এবং বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সে কারণে উত্তরা থেকে আমতলী হয়ে গুলশান ১ এর দিকে যেতে ইচ্ছুক যানবাহনকে কাকলীতে বাঁয়ে মোড় নিয়ে গুলশান ২ হয়ে গুলশান ১- পুলিশ প্লাজা রুট ব্যবহার করতে বলা হয়। একইভাবে জাহাঙ্গীর গেট/মহাখালী থেকে আমতলী-গুলশান ১ এর দিকে যেতে আসা গাড়িকে বনানী কবরস্থানের সামনে ও আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে ইউটার্ন নিয়ে গুলশান ২ হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া মহাখালী ফ্লাইওভার ব্যবহার করে উত্তরের দিক থেকে আসা যানবাহন জাহাঙ্গীর গেটের দিকে যাওয়া এবং জাহাঙ্গীর গেট থেকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করে উত্তরের দিকে যাওয়া যাবে বলে জানানো হয়।

২০১৪ সালের শেষ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৭৯টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার সাত সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। কলেজগুলো হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

পরে ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই সাত কলেজকে অধিভুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

গত ডিসেম্বরে সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাত কলেজকে নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ) নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনশন ও আন্দোলন শুরু করেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তারা মহাখালী রেলক্রসিং ও সড়ক অবরোধ করেন। কলেজের সামনের সড়ক আটকে টানা কয়েকদিন আন্দোলন চালান।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি ‘বাস্তবায়ন সম্ভব নয়’ বলে জানানো হয়। তবে অন্য ছয় দাবির ব্যাপারে আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

এরপরও তিতুমীর কলেজকে আলাদা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণার দাবি শিক্ষার্থীরা অব্যাহতভাবে জানিয়ে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও তারা সড়ক অবরোধে নেমেছেন।