রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পোষ্য কোটা’ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ক্যাম্পাসে।

শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।

এর আগে শুক্রবার বিকাল থেকে নয়জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে বসেন ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবিতে। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাইন উদ্দিন প্রশাসনিক ভবনে আসলে শিক্ষার্থীরা গাড়ি আটকে স্লোগান দিতে থাকেন এবং তার গাড়ির উপর টাকা ছুড়ে দেন।

পরে উপ-উপাচার্য মাইন উদ্দিন ও প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান তার বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন। উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের একটি দল জুবেরি ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধাক্কাধাক্কির মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ে যান এবং শিক্ষকরা তাদের ডিঙ্গিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।

বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জুবেরি ভবনে উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তারা স্লোগান দেন— ‘এক দুই তিন চার, সব সালারা বাটপার’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, পোষ্য কোটা নো মোর’, ‘কোটা না ভিক্ষা, ভিক্ষা ভিক্ষা’।

অন্যদিকে, জুবেরি ভবনের বাইরে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একত্রিত হয়ে অবস্থান নেন। ফলে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ান শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য স্যারকে অবরুদ্ধ করে তার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে আমরা জুবেরি ভবনের লাউঞ্জে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে ফিরে গিয়ে পুনরায় আসার পর ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা আবারও বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কি হয়। আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে গেছে। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু এসব হারিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়।”

এর আগে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রশাসন ভবনের সামনে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। পরে তার সঙ্গে আরও প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী যোগ দেন।

পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ ১৭ সেপ্টেম্বর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করবেন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ভর্তি কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শর্তসাপেক্ষে ‘পোষ্য কোটা’ অনুমোদন করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

এর আগে ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য স্থায়ীভাবে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু ১৩ আগস্ট থেকে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালসহ আট দফা দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি অংশ কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে ২৪ আগস্ট প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা তিন দিনের কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্তে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহাল করায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।