মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিমের সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার জাপা মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ

রাজধানীর মিন্টো রোডে ‘সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির’ সময় গ্রেপ্তার মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীর সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ কাজ করছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

কাজী মামুনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সোমবার তার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী বাংলাদেশে আসলে তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান এ জাপা নেতা। এনায়েতের আবাসন ব্যবস্থা, খরচ জোগানো ও সহযোগী হিসেবে তিনি কাজ করছিলেন।

রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের কাছ থেকে রবিবার রাতে মামুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হকের আদালতে তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর আক্তার মোর্শেদ।

আবেদনে বলা হয়, কাজী মামুনুর রশীদসহ নাম না জানা আসামিরা এনায়েত করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগসাজসে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। বর্তমান সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এবং উচ্চপদস্থ লোকজন ও ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপনে সভা, পরামর্শ করেন। বিভিন্ন স্থানে গণবিক্ষোভের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র, সহায়তা বা প্ররোচিত করার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে উচ্ছেদের প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মামলার ঘটনার সঙ্গে এ আসামির জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এনায়েত করিম চৌধুরী বাংলাদেশে আসলে মামুনুর রশীদ তার আবাসন ব্যবস্থা, খরচ নির্বাহ ও সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন মর্মে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। সে কারণে বিস্তারিত তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এনায়েত করিমসহ পলাতক অন্য আসামিদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশ করে কাজী মামুনুর রশীদ একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে কোনো রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী বা অন্য কোনো অনিবন্ধিত অথবা নিবন্ধন স্থগিতকৃত/নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে গোপনে সলাপরামর্শ করেন। এসব তথ্য উদঘাটন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে ২০ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মিন্টো রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাডো গাড়িতে করে ‘সন্দেহজনকভাবে’ ঘুরছিলেন তিনি। পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ঘোরাঘুরির কারণ জানতে চাইলে এনায়েত কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তখন পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রমনা মডেল থানায় মামলা করে।

এনায়েত করিম চৌধুরী ১৯৮৮ সালে আমেরিকায় যান এবং ২০০৪ সালে আমেরিকান পাসপোর্ট পান। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে আসেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

সেই এনায়েত করিম চৌধুরীর সঙ্গে জাপা নেতা কাজী মামুনের যোগসূত্র থাকার কথা বলছে পুলিশ। তার ‘সহযোগী হিসেবে’ মামুন কাজ করছিলেন বলে সোমবার মামুনের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, এনায়েত করিমের সহযোগী কাজী মামুন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেনে সহায়তা করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। কিন্তু ওই অর্থের উৎস এবং লেনদেনের কারণ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা করেননি, যে কারণে তা উদঘাটন করা প্রয়োজন। কাজী মামুনের সহায়তায় এনায়েত করিম সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে অর্থ বিনিয়োগ করতেন, কাদের কাছ থেকে নিয়ে কাদের দিতেন, সেটি উদঘাটন করা প্রয়োজন। তিনি এনায়েত করিমকে বিমানবন্দর থেকে ‘রিসিভ’ করে তার তত্ত্বাবধানে হোটেল সোনারগাঁওয়ে অবস্থান করে যে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করতে সহায়তা করেছেন, তার তথ্য উদঘাটন করা প্রয়োজন। এজন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তবে কাজী মামুনের আইনজীবী সিরাজুল হক ফয়সাল রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, এনায়েত করিমের সঙ্গে মামুনুর রশীদের কানেকশন, তাকে রিসিভ করেছেন বলেছেন। তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) এ ধরনের ‘কেস ডায়েরি’ জমা দিয়েছেন কি না? আমাদের স্পষ্ট কথা, এনায়েত করিমের সঙ্গে তার কোনো ধরনের কানেকশন ছিল না এবং তিনি তাকে রিসিভও করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা এ সংক্রান্ত কোনো সিডি জমা দেননি।”

রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “এনায়েত করিম বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আমাদের প্রতিবেশী দেশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। কাজী মামুন এয়ারপোর্ট থেকে তাকে রিসিভ করে ‘পেট্রোনাইজ’ করেন। তারা দেশের সার্বভৌম নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, টোকাইলীগ মিছিল বের সরকারের বিরুদ্ধে। এখানে তাদের ইন্ধন রয়েছে।”

প্রসিকিউটর বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন। আজকের এ আসামিসহ অন্যরা ‘র’ এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ইউনূসকে প্রতিহত করতে চায়। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তার সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।”

জবাবে কাজী মামুনের আইনজীবী সিরাজুল হক ফয়সাল বলেন, “মামুনুর রশীদ আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগের কেউ না। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।”

উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত কাজী মামুনের ছয় দিন রিমান্ডের আদেশ দেয়।