ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশ হেফাজতে তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ, এসআই গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে এক তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের দাবি, অবৈধভাবে পাঁচ দিন আটকে রেখে তাকে নির্যাতন করা হয়।

এ ঘটনায় সোমবার বিকালে সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মো. মহিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার পর রাতেই নিহত তরুণের বড় ভাই বাদী হয়ে এসআই মহিম উদ্দিনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

নিহত তরুণের নাম মো. আব্দুল্লাহ (২৩)। তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে। স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আব্দুল্লাহ সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হেফাজতে ছিলেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— নবীনগরের সলিমগঞ্জের বাড়াইলের তবি মিয়া (৩৪), একই গ্রামের আল আমিন (৩২) এবং বাঞ্ছারামপুরের বাহেরচরের আয়নাল হক (৩০)।

পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, এসআই মহিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিকালে তাকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্বজনদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার সলিমগঞ্জের তবি মিয়ার বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তবি মিয়ার এক আত্মীয় নবীনগর থানায় অভিযোগ করেন। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে তবি মিয়ার নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন আব্দুল্লাহকে চোর সন্দেহে সলিমগঞ্জ বাজারের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সামনে থেকে আটক করে। প্রথমে তাকে রাস্তায় এবং পরে তবি মিয়ার বাড়িতে নিয়ে পিটুনি দেওয়া হয়। সেখানে তাকে আটকে রেখে নির্যাতনও চালানো হয়।

পরে আব্দুল্লাহকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে মহিম উদ্দিন আব্দুল্লাহকে ক্যাম্পে আটকে রাখেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

রোববার বিকালে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আব্দুল্লাহর চাচাতো ভাই শাকিল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “মিথ্যা চুরির অভিযোগে আমার ভাইকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। তার পায়ে সুঁই ঢুকিয়েছে, প্লাস দিয়ে কপালের চামড়া উঠিয়েছে। এছাড়া সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়েছে।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে গেলে সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহিম উদ্দিন ও তবি মিয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, “আব্দুল্লাহকে ক্যাম্পে অবৈধভাবে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে ধারণা করছি। বিভিন্ন সময় তাকে চিকিৎসা দেওয়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।”