বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি দলগুলোকে ফুটবল থেকে বহিষ্কারের দাবি ক্রমেই বাড়ছে। তবে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, রাজনৈতিক জটিলতা সমাধান করা ফিফার কাজ নয়। তিনি উল্লেখ করেছেন, ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই শান্তি ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার জুরিখে ফিফার নির্বাহী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যার সভাপতিত্ব করেন ইনফান্তিনো। আগামী সপ্তাহে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই শুরুর আগে বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচিতে ইসরায়েল অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
দুই বছর ধরে গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে ইউরোপের ফুটবল কর্তারা ইসরায়েলি দলগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউসে শান্তির প্রস্তাব দেওয়ার পর চাপ কিছুটা কমেছে।
ফিফার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইনফান্তিনো তাঁর ৩৭ সদস্যের কাউন্সিলকে বলেছেন, ‘গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে শান্তি ও ঐক্য প্রচার করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’ বিজ্ঞপ্তিতে সরাসরি ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ইনফান্তিনো বলেন, ‘ফিফা ভূরাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তবে ফুটবলের ঐক্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধ কাজে লাগিয়ে বিশ্বজুড়ে এই খেলাকে এগিয়ে নিতে হবে—এটাই ফিফার দায়িত্ব।’ ফিফা বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেনি এবং ইনফান্তিনোও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
ইসরায়েল ১১ অক্টোবর অসলোয় নরওয়ের বিপক্ষে এবং ১৪ অক্টোবর উদিনেতে ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ খেলবে। উয়েফার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ‘আই’ গ্রুপে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে, দ্বিতীয় দল প্লে-অফে যাবে।
নরওয়ে এবং আরও কয়েকটি ইউরোপীয় ফুটবল ফেডারেশন আগে উয়েফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল, জুরিখে ফিফার বৈঠকের আগে নির্বাহী কমিটির ভোটে ইসরায়েলি দলগুলোকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। তুরস্কের ফুটবল ফেডারেশন সরাসরি ইসরায়েলকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে ফিফা ও উয়েফার কাছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০ সদস্যের উয়েফা নির্বাহী কমিটির ভোট হলে প্রস্তাব পাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। শুধু ইসরায়েল ও জার্মানির প্রতিনিধি এতে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
২০২৬ বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো। এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিফা উয়েফার ভোটাভুটি অনুসরণ করবে—এমন সম্ভাবনা ছিল না। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ফুটবলে ইসরায়েলের মর্যাদা রক্ষায় কাজ করার ঘোষণা দেওয়ার পর উয়েফার সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আরও কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ইসরায়েলের জাতীয় ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার কোনো চেষ্টা যেন সফল না হয়, সে জন্য আমরা অবশ্যই কাজ করব।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শান্তি প্রস্তাব সোমবারই মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ স্বাগত জানিয়েছে। এর মধ্যে কাতারও আছে, যারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থক এবং উয়েফা ও সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে।
বৃহস্পতিবারের ফিফা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উয়েফা সভাপতি সেফেরিন এবং ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নাসের আল-খেলাইফি। কাতার সরকারের সদস্য খেলাইফি পিএসজির সভাপতিও। ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান জিবরিল রাজুব এ সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে আছেন। তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি ক্রিস্ট্রি কভেন্ট্রির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
