চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন: কেন্দ্রভিত্তিক ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে মতবিনিময় সভা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে কোন কেন্দ্রে কোন হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন—এ বিষয়ে প্রার্থী ও আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে নির্বাচন কমিশন।

রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মিলনায়তনে আয়োজিত এই সভায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য নানা তথ্য জানানো হয়। সেখানে জানানো হয়, ভোটগণনা ওএমআর মেশিনে সম্পন্ন হবে।

নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জানান, প্রার্থীদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা নিজেদের মতামতও দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ, পুরাতন কলা অনুষদ, নতুন কলা অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদ—এই পাঁচটি অনুষদ ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

আরিফুল হক সিদ্দিকীর ভাষ্য, নির্বাচনের জন্য এই পাঁচ ভবনে মোট ১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে সম্ভাব্য ৬৫টি নির্বাচনি কক্ষ, ১৪টি প্রিজাইডিং কক্ষ এবং ৭টি সাব-প্রিজাইডিং কক্ষসহ মোট ৮৬টি কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষে পাঁচটি করে ব্যালট বাক্স থাকবে—সংখ্যা কিছুটা কমবেশিও হতে পারে।

তিনি জানান, চারটি ব্যালট বাক্স চাকসুর জন্য এবং একটি হল সংসদ নির্বাচনের জন্য থাকবে। একটি ভোটকক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ জন ভোট দিতে পারবেন এবং একজন ভোটার ভোটকেন্দ্রে সর্বাধিক ১০ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারবেন।

প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ তিন দিন পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের কারণে ১২ থেকে ১৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে এবং নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকবে।

নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত মতবিনিময় সভার তথ্য অনুযায়ী—

  • পুরাতন কলা অনুষদে ভোট দেবেন সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থীরা।
  • নতুন কলা অনুষদে শাহজালাল, এ এফ রহমান ও আলাওল হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।
  • বিজ্ঞান অনুষদে ভোট দেবেন শাহ আমানত, শহীদ আবদুর রব ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরা।
  • সমাজবিজ্ঞান অনুষদে ভোট হবে নওয়াব ফয়জুন্নেসা, শামসুন্নাহার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও অতীশ দীপঙ্কর হলের শিক্ষার্থীদের জন্য।
  • ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ভোটগ্রহণ হবে প্রীতিলতা, বিজয় ২৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের জন্য।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি আবাসিক হল ও একটি হোস্টেল রয়েছে—এর মধ্যে ৯টি ছাত্রদের এবং ৫টি ছাত্রীদের হল। এছাড়া রয়েছে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল।

ভোটের নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সেলের প্রধান সাঈদুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর চেষ্টা চলছে। চাকসুর ২৬টি পদের জন্য মোট ৪১৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। ব্যালট পেপারে ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হবে—যেমন ভর্তি পরীক্ষার বহু নির্বাচনি প্রশ্নের নম্বর গণনা করা হয়।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি ব্যালট পেপারে আলাদা নিরাপত্তা কোড থাকবে, যার মাধ্যমে আসল ব্যালট যাচাই করা যাবে। কোনো নকল কাগজ ওএমআর মেশিনে গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত হবে। প্রার্থীদের ছবি না দিয়ে কেবল নাম ও ব্যালট নম্বর থাকবে; একই নাম থাকলে ডাকনাম যুক্ত করা হবে।

সাঈদুর রহমান চৌধুরী জানান, নির্বাচনের সময় পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনতে বাইরের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, যদিও এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

সভায় বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন এবং ভোট প্রক্রিয়া সংক্রান্ত নানা বিষয়ে মতামত দেন। সভায় চাকসু নির্বাচনের প্রধান কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার, অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, মো. আনোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।