ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের আমলাতন্ত্রকে একটি নির্দিষ্ট দলের ‘পকেটে নেওয়ার’ চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। তবে তিনি সেই দলের নাম মুখে উচ্চারণ করেননি।
ফখরুল বলেন, “আমলাতন্ত্রকে কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটাকে আমরা কোনো মতেই বরদাশত করব না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচনের সময়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র থাকতে হবে, সরকার থাকতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো দলের প্রচারণাকে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করে যদি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে আমরা তা মেনে নেব না। বর্তমান সরকারকে আবারো বলতে চাই—একদম নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায়, আমরা সেটা মেনে নেব না, এই দেশের মানুষও মেনে নেবে না।”
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “জুন মাসে আমাদের নেতা তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন। সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে, অন্যথায় নির্বাচন হবে না।”
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দিন জেহাদের স্মরণে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এইচএম এরশাদ পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে দিনটি ‘জেহাদ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাজউক অ্যাভিনিউয়ের জেহাদ স্কয়ার স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি নেতারা, যাদের মধ্যে ছিলেন আমান উল্লাহ আমানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা।
‘বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচারে লাভ হবে না’
দেশ গঠনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভূমিকা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমান ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। আজ আমাদের নেতা তারেক রহমান সুদূর আট হাজার মাইল দূরে থেকেও আমাদের প্রতিনিয়ত উজ্জীবিত করছেন। তিনি বার্তা দিয়েছেন—‘জাগো বাংলাদেশের মানুষ, নিজের অধিকার আদায় করে নাও।’”
তিনি বলেন, “আমরা সেই অধিকার আদায়ের পথে আছি। পথে বাধা আসছে, নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সংস্কার আমরা এনেছি, আমরাই করব। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি চলতেই থাকবে। তাই বিএনপিকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচার করে কোনো লাভ হবে না।”
‘ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন?’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের পত্রিকায় দেখলাম, কিছু ব্যক্তি বা দল হুমকি দিচ্ছেন—অমুক প্রতীক না দিলে নির্বাচনে যাব না, কিংবা অমুক প্রতীক থাকতে পারবে না। ভাই, আমরা তো কারও প্রতীকে বাধা দিইনি। কোন প্রতীক দেবে, সেটা নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে। তাহলে অযথা বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন?”
তিনি বলেন, “ধানের শীষ অপ্রতিরোধ্য। গ্রাম থেকে শহর—সবখানে একটাই স্লোগান উঠেছে, ‘বাংলাদেশে ধানের শীষ অপ্রতিরোধ্য।’ এই কারণেই ধানের শীষকে রুখতে নানা চক্রান্ত হচ্ছে। কারণ, ধানের শীষ টিকে গেলে বাংলাদেশের শত্রুরা পরাজিত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শেখ হাসিনা, আমাদের সেই মনোস্টার শেখ হাসিনা, তিনি এমনিতেই দিল্লি যাননি—যেতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ আমরা সেই গ্রাউন্ড তৈরি করেছি। দীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রামে বুকের রক্ত দিয়ে আমরা গণতন্ত্রের সেই ভিত্তি গড়ে তুলেছি।”
তিনি আরও বলেন, “কেউ যদি প্রশ্ন করে, জোরে বলবেন—গণতন্ত্র আমরা এনেছি, সংস্কার আমরা এনেছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করব আমরাই। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে আবারও গণতন্ত্র রক্ষা করব।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান। সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।
এতে আরও বক্তব্য দেন শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুর রহমান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, খন্দকার লুৎফর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, কামরুজ্জামান রতন, আসাদুর রহমান খান আসাদ, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ছাত্রদল নেতা রাকিবুল ইসলাম রাকিব, শহীদ জেহাদের বড় বোন চামেলী মাহমুদ ও স্বজন শরীফ উদ্দিন আহমেদ।