বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে অযথা টানাটানি কেন—এ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “ভাই, আমরা তো তোমাদের মার্কাতে বাধা দিইনি। তোমাদেরকে তোমাদের মার্কা দেবে নির্বাচন কমিশন, সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”
১৯৯০–এর স্বৈরাচারবিরোধী গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। শুক্রবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে শহীদ জেহাদ স্মৃতি সংসদ।
শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে নির্বাচন কমিশন দলটিকে এ প্রতীক দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন কমিশনে এক বৈঠকের পর তাঁদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “হয় শাপলা প্রতীক দিতে হবে, নয়তো ধান, সোনালি আঁশ বাদ দিতে হবে”—এই শর্ত নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে এনসিপি। তিনি আরও বলেন, “শাপলা প্রতীক ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন নেবে না।”
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ধমক দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে যে অমুক মার্কা না দিলে আমরা নির্বাচনে যাব না বা ওমুকের মার্কা থাকতে পারবে না। আমরা তো বলিনি যে তোমাদেরকে মার্কা দেওয়া যাবে না। তাহলে অযথা বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন?”
ধানের শীষ অপ্রতিরোধ্য উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “ধানের শীষকে থামিয়ে রাখা যায় না। গ্রামেগঞ্জে যেখানে যাবেন, সেখানে একটাই স্লোগান—ধান লাগাও, ধান লাগাও। এটাই এখন প্রধান সমস্যা। তাই ধানের শীষকে রুখে দিতে হবে, আটকে দিতে হবে। কারণ, ধানের শীষ জিতে গেলে বাংলাদেশের শত্রুরা তাদের ষড়যন্ত্রে পরাজিত হয়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।”
শেখ হাসিনাকে ‘দানব’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “মনস্টার শেখ হাসিনা এমনি এমনি দিল্লি পলাইয়া যায়নি, যেতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, আমরা সে ভিত্তি তৈরি করেছি। দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে, সংগ্রাম করে, রক্ত দিয়ে আমরা সেই ভিত্তি অর্জন করেছি।”
গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি বলেন, “কয়েক দিন লাফালাফি করলে গণতন্ত্র হয় না। গণতন্ত্র গড়তে হলে অনেক পরিশ্রম দরকার, ত্যাগ দরকার, জনগণের কাছে যাওয়া দরকার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য মানুষের কাছে যাওয়া পার্টি।”
আমলাতন্ত্রকে একটি নির্দিষ্ট দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “দেখছি, আমলাতন্ত্রকে একটি দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র ও সরকার থাকতে হবে নির্বাচনের সময়। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে—কোনো দলের কাছে যেন মাথা নত না করে।”
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের স্মৃতিচারণা করে বলেন, “সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে শহীদ জেহাদের লাশ রেখে আমরা শপথ করেছিলাম স্বৈরাচার পতনের। পরের দিন হরতাল কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। আহত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে আমরা শহীদ মিনারে গিয়ে আবার শপথ নিই। শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে সফল হই।”
স্মরণসভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।