ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু, উত্তর গাজায় ফিরছে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো

ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তি চুক্তি অনুমোদনের পর গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যেতে শুরু করেছে। এদিকে গাজার পশ্চিমাংশের আবাসিক এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোও গাজার মূল অংশে ফিরতে শুরু করেছে, যেখান থেকে তাদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সূত্রমতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কিছু ব্রিগেড ও ডিভিশনকে গাজার কেন্দ্রীয় অংশ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নুসেইরাত আশ্রয় শিবির থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যদিও তারা এখনও নেতজারিম করিডোরে প্রবেশ করতে পারেনি—যেখানে আগে ইসরায়েলি বাহিনী অবরোধ করে রেখেছিল। পরিবারগুলো অপেক্ষায় আছে, ওই অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের শেষ ট্যাংকটি চলে যাওয়ার পর তারা সেখানে প্রবেশ করতে চায়।

তবে ভোর থেকেই ইসরায়েলি ড্রোন, যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের তৎপরতা বেড়েছে। সকালে যেসব স্থানে মানুষ বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেখানে হামলার খবর পাওয়া গেছে। আল-আহলি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, সকাল থেকে গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

খান ইউনিসের দিক থেকেও ইসরায়েলি হামলার খবর এসেছে। দক্ষিণ গাজার ওই অংশে ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে জানিয়েছে, যেসব এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী এখনও অবস্থান করছে, সেখানে যেন কেউ না যায়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা এবং কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত গাজা সিটির সীমান্তবর্তী এলাকায় কাউকে না যেতে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিশরের শার্ম আল শেখে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তিন দিনের পরোক্ষ আলোচনার পর বৃহস্পতিবার একটি চুক্তি হয়। ওই আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, মিশর, কাতার ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ইসরায়েল সরকার শুক্রবার প্রথম প্রহরে চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়। এর মাধ্যমে গাজায় সংঘাত বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কথা।

চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল সরকারের অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনাবাহিনী ‘ইয়েলো লাইন’ পর্যন্ত সরে যাবে। গাজায় হামলা বন্ধ করে মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া হবে। অন্যদিকে হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ জন জীবিত জিম্মি এবং ২৮ জনের মৃতদেহ ফেরত দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।

তাদের মধ্যে ২৭০ জন বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং বাকি ১৭০০ জন বিনাবিচারে বন্দি, যারা ২০২৩ সালের হামলায় জড়িত ছিলেন না। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ২২ জন কিশোরও রয়েছে। এছাড়া গাজার ৩৬০ জন যোদ্ধার মৃতদেহও ফেরত দেবে ইসরায়েল।

গাজার যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে মার্কিন সেনাবাহিনী ২০০ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স মোতায়েন করবে, তবে তারা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ভেতরে প্রবেশ করবে না।

হামাসের নির্বাসিত গাজাপ্রধান খলিল আল-হায়া জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার বিষয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছেন।

গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। অঞ্চলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

বন্দি-জিম্মি বিনিময় কার্যকর হওয়ার মধ্যেই খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা বহন করা অসংখ্য ট্রাকের গাজায় প্রবেশের কথা রয়েছে। এই সহায়তার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে গাজার লাখ লাখ মানুষ, যারা ইসরায়েলি হামলায় উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়ে এখনো বিভিন্ন তাবুতে আশ্রয় নিয়ে আছেন।