সালমান শাহ হত্যার ২৯ বছর পর হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ

চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর আদালত হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দিয়েছেন। সোমবার ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান জানিয়েছেন।

আদালত এদিন সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে আদালত হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানার পুলিশকে।

আবিদ হাসান জানান, “সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন, কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, যেখানে সালমানকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা উঠে এসেছে। এরপরও মামলাটি দীর্ঘদিন আটকে ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “সবশেষে পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতি আদেশ দেন। আজ আদালত সেই আদেশ বাতিল করে কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। রমনা মডেল থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। সে সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল।

ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন। আদালত তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেয়। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানায়।

সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমর উদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক প্রতিবেদন দাখিল করেন, যেখানে হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।

সালমান শাহর বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলাটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এরপর মামলাটি র‌্যাব তদন্তে নেয়। রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত র‌্যাবকে আরও তদন্ত না করার নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ ও আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পিবিআই উল্লেখ করে, “চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, পারিবারিক কলহ এবং স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নীলুফা চৌধুরীকে ছেড়ে যাওয়ার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।”

এই প্রতিবেদনের পরও সন্তুষ্ট নন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে রিভিশন আবেদন দায়ের করা হয়।

২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন। বিভিন্ন কারণে কয়েক বছর শুনানি স্থগিত থাকলেও সম্প্রতি রিভিশন আবেদনের শুনানি শুরু হয় এবং ১৩ অক্টোবর শেষ হয়। আদালত আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর (সোমবার) দিন ঠিক করেন।