চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল ২০৩০ সালে চালুর আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সেখানে ২৫ হাজার লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। জানান, প্রকল্পটির দুটি টার্মিনালে বিদেশি দুটি কোম্পানি মোট ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ (এফডিআই) করবে।
বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শনকালে আশিক চৌধুরী বলেন, “এখানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ডিংয়ে কিছু কাজ হচ্ছে, সরকার থেকেও কিছু ফাইন্যান্সিং হচ্ছে। ব্রেক ওয়াটার অংশটি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ডিংয়ে হবে। এডিবি অ্যাডভাইজার হিসেবে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।”
তিনি জানান, “পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ড—এই দুই অপারেটর প্রায় এক বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করবে। প্রথম দুটি টার্মিনালেই মোট দুই বিলিয়ন ডলারের মতো এফডিআই দেখা যাবে। এই বিনিয়োগ গ্র্যাজুয়ালি আসবে।”
চেয়ারম্যান বলেন, “তাদের নির্মাণকালীন সময়েও তারা ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করবে। আমরা আশা করছি, ২০৩০ সালের দিকে এই পোর্টগুলো চালু হবে।”
তিনি বলেন, “২০১৫ সালের তুলনায় এখন রপ্তানি ভলিউম তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণে আমাদের সব পোর্টকে একসাথে সক্রিয় করতে হবে। এই প্রজেক্ট আমাদের জন্য একটি মাস্টার প্রজেক্ট। এটি বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার চেহারা বদলে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সঙ্গে সঙ্গে ২৫ হাজার পরিবারও জড়িত হবে। অর্থাৎ, প্রায় এক লাখ মানুষ এই এলাকায় বসবাস ও কাজ করবে। তাই বাসস্থান, চিকিৎসা, যাতায়াত ও শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়গুলোও পরিকল্পনায় আনতে হবে।”
পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, “বর্তমান পোর্টটি নদীবন্দর হওয়ায় জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হয়, বড় জাহাজ ঢুকতে পারে না। বে টার্মিনাল হলে বড় জাহাজ আসতে পারবে, পরিবহন খরচ কমবে এবং এফিসিয়েন্সি বাড়বে।”
তিনি জানান, “বে টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল করার পরিকল্পনা আছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি অনুমোদন পেয়েছে। টার্মিনাল-১ করবে পিএসএ সিঙ্গাপুর, টার্মিনাল-২ করবে ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং টার্মিনাল-৩ ওপেন টেন্ডারে হবে। চতুর্থটি এনার্জি টার্মিনাল, যা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করা হবে।”
তিনি বলেন, “এই টার্মিনাল থেকে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন টিইইউএস হ্যান্ডলিং সক্ষমতা পাওয়া যাবে, যা ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি হতে পারে।”
চলতি বছরের শেষ দিকে প্রকল্পের কাজ শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন বন্দর চেয়ারম্যান।
পরিদর্শন শেষে বিডা চেয়ারম্যান নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল ঘুরে বলেন, “বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যমণি চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম হবে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী।”
দুবাইয়ের জেবল আলী পোর্ট পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই পোর্টে ষোলটি কন্টেইনার একটার উপর আরেকটা রাখার প্রযুক্তি আনা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আমাদেরও গ্রহণ করা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “জব ক্রিয়েশন আমাদের প্রধান ইস্যু। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে চট্টগ্রামের জন্য, যত বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়।”
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের জন্য বন্দরের টার্মিনালগুলোর মান যত উন্নত ও কার্যকর হবে, দেশের ব্যবসা পরিবেশেও তার বড় অবদান থাকবে।”
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।