তিন মাসের জন্য অনুমতি পাওয়ার পরও মৌসুমের দ্বিতীয় দিনেই সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের উপস্থিতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দ্বীপের ব্যবসায়ীরা।
নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে রেস্তোরাঁ, ডাব বিক্রেতা ও ভ্যানচালকরা অধীর আগ্রহে পর্যটকদের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু রোববার সেন্ট মার্টিনে কোনো পর্যটক যাননি।
২২ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল করা যাবে, তবে রাত্রিযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করতে পারবেন। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
শনিবার থেকে মৌসুম শুরু হয়েছে। সেই দিন মাত্র চারজন পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার জন্য জাহাজ ঘাটে গিয়েছিলেন। ফলে কোনো জাহাজ ছাড়েনি। দ্বিতীয় দিনেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিনে আসা-যাওয়ায় ১৪-১৫ ঘণ্টা সময় লাগে, কিন্তু সেখানে থাকতে হয় মাত্র এক ঘণ্টা। জাহাজ মালিকদের মতে, এ কারণে পর্যটকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
সেন্ট মার্টিন জেটি ঘাটে ‘দারুচিনি দ্বীপ রেস্তোরাঁ’র মালিক ছালামত উল্লাহ বলেন, “আজ দ্বিতীয় দিনে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের দেখা নেই। চার বছরের চুক্তিতে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে একটি রেস্তোরাঁ ভাড়া নিয়েছিলাম। প্রথম বছর মিয়ানমারের সীমান্ত সমস্যার কারণে পর্যাপ্ত পর্যটক আসেনি। গত বছর সরকারের নানা বিধিনিষেধে দুই-তিন মাস পর্যটক আসলেও ভালো ব্যবসা হয়নি। আশা করেছিলাম, পুরো মৌসুম টিকে থাকলে অন্তত মূলধনের টাকা বের করা যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেটাও সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত লোকসান দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।”
সেন্ট মার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম বলেন, “সরকার নভেম্বর মাসে পর্যটকদের দ্বীপে রাত্রিযাপন বন্ধ রেখে জাহাজ ছাড়ার স্থান কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া থেকে নির্ধারণ করেছে। এত দূর থেকে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে আসতে কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়। আমরা মনে করি, সরকার লোক দেখানোভাবে দ্বীপ ভ্রমণ খুলেছে। তিন মাসের অনুমতিতে অন্তত প্রকৃত পর্যটকের আগমনের সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত। দ্বীপের সাধারণ মানুষের কষ্টও বিবেচনা করা উচিত।”
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘুরতে আসা দিনাজপুরের সোনালী ব্যাংকের কর্মী আবদুল মান্নান বলেন, “ইচ্ছে ছিল সেন্ট মার্টিনে ঘুরতে যাব। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তাই শাহপরীর দ্বীপে ঘুরতে আসা। সেখানে দিনে যাওয়া-ফিরার নিয়মে সময় ও কষ্টের হিসাব মিলছে।”
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, “আজও কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে না আসায় দ্বীপের মানুষ হতাশ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দ্বীপের পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা। জাহাজ চলাচলের ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া BIWTA ঘাট থেকে। আমরা চাই, উখিয়ার ইনানী থেকে জাহাজ ছাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।”
কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন পথের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, “রাত্রিযাপন বন্ধ থাকায় কক্সবাজার হয়ে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিন যেতে চান না। প্রথমে আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু পর্যটকের সাড়া না পাওয়ায় কক্সবাজার থেকে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছি। প্রতিটি জাহাজে পর্যাপ্ত যাত্রী না হলে খরচও উঠবে না। সরকার চাইলে ইনানী থেকে জাহাজ ছাড়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে পারে।”
