মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে না নামা পর্যন্ত নীতি সুদহার কমাতে না বলল আইএমএফ

আগামী বছরের শুরুতে ঋণের নীতি সুদহার কমানোর যে ইঙ্গিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দিয়েছিলেন, তাতে আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে, মূল্যস্ফীতির হার অন্তত ৭ শতাংশে না নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।

ঢাকা সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনায় এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, “তারা (আইএমএফ) বলেছে, মূল্যস্ফীতি এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নামেনি; ধীরে কমছে। অন্তত ৭ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত নীতি সুদহার কমানো ঠিক হবে না। অর্থাৎ, তারা এই মুহূর্তে নীতি সুদহার কমানো থেকে বিরত থাকতে বলেছে।”

চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থের ব্যবহার দেখতে ঢাকায় এসেছে আইএমএফের রিভিউ মিশন। গত ২৯ অক্টোবর থেকে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এটি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল এবং পরবর্তী মাসগুলোতেও উচ্চ ছিল।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই নীতি সুদহার বাড়িয়ে আসছে। সরকার পরিবর্তনের পর নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও সেই নীতি অব্যাহত রাখেন। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে গড় ঋণসুদ ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে গভর্নর কয়েক দফা জানিয়েছিলেন, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসায় আগামী ডিসেম্বরের পর সুদহার কমতে পারে। তবে আইএমএফ মনে করছে, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত তা করা ঠিক হবে না।

আরিফ হোসেন বলেন, “গভর্নর চেয়েছিলেন ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার দেখে নীতি সুদহার নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে। মূল্যস্ফীতি কমছে, তবে ধীরে। ডিসেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণ করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”

আইএমএফের বাংলাদেশ মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জির নেতৃত্বে সফরকারী দলটি আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আলোচনা চালাবে। ঋণ সূচি অনুযায়ী, ডিসেম্বরের ষষ্ঠ কিস্তি সময়মতো ছাড় না হলে সপ্তম কিস্তির সঙ্গে একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

এর আগে বিনিময় হার ইস্যুতে সমঝোতা দেরিতে হওয়ায় চতুর্থ কিস্তির অর্থ পেতে বিলম্ব হয়েছিল, যা পরবর্তীতে পঞ্চম কিস্তির সঙ্গে একত্রে ছাড় হয়।

২০২২ সালে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় একাধিক দফা আলোচনার পর বাংলাদেশ ২০২৩ সালের শুরুতে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে। পরে তা বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়।

ঋণ কর্মসূচির আওতায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায়। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি আসে ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তি হিসেবে পাওয়া যায় ১১৫ কোটি ডলার এবং একই মাসে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।