জন্মভূমি দিনাজপুরে ভোটের ময়দানে খালেদা জিয়া

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসনে।

সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে অংশ নিতে পারেন। খালেদা জিয়া অতীতে একাধিকবার পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন এবং কখনও পরাজিত হননি।

পারিবারিক শেকড় ও প্রার্থিতা

বেগম খালেদা জিয়ার পৈত্রিক নিবাস ফেনীতে, আর তাঁর স্বামী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পৈত্রিক বাড়ি বগুড়ায়।
জন্ম ও শৈশব কাটানো দিনাজপুরেই এবার প্রথমবারের মতো প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁর বড় বোন খুরশীদ জাহান হক।

বগুড়ার রাজনীতি ও ‘জিয়া পরিবারের’ ঐতিহ্য

বগুড়া-৬ আসন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান এবং দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
১৯৯১ সাল থেকে বেগম খালেদা জিয়া নিয়মিত এই অঞ্চলের দুটি আসনে—বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর)—নির্বাচন করে আসছেন এবং কখনও হারেননি।
বগুড়া-৭ আসনের গত ১২টি নির্বাচনে বিএনপি জয় পেয়েছে ছয়বার, যার মধ্যে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন খালেদা জিয়া নিজে। বাকি ছয়বারের মধ্যে জাতীয় পার্টি তিনবার, আওয়ামী লীগ দুবার এবং একবার স্বতন্ত্র (বিএনপি-সমর্থিত) প্রার্থী জয়ী হন।

এই আসনে খালেদা জিয়া চারবার বগুড়া-৬ নিজের জন্য রেখে বগুড়া-৭ আসনটি অন্য নেতার জন্য ছেড়ে দেন। ২০০৮ সালের উপনির্বাচনে মওদুদ আহমদ বিজয়ী হন, আর ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন) ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয় পান বিএনপির হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু।

এবার বগুড়া-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
১১ অক্টোবর ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়ার সাতটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে এক সভা হয়, যেখানে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেন। সভার পর পাঁচজনকে প্রচার জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হলেও বগুড়া-৬ ও ৭ আসন নিয়ে কাউকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি—যা থেকে স্থানীয় নেতারা অনুমান করেছিলেন, এ দুটি আসনে ‘জিয়া পরিবারের’ কেউ প্রার্থী হবেন।

ফেনীতে আবারও ‘নিজের মাটিতে’

ফেনী-১ আসনটি ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাব্দীর নির্বাচনী ইতিহাসে এ আসনটি প্রায়ই বিএনপির দখলে থেকেছে।
বেগম খালেদা জিয়া এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন—১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৬ (জুন), ২০০১ ও ২০০৮ সালে। তাঁর আদি নিবাস ফেনীতে হওয়ায় স্থানীয়দের মুখে প্রচলিত স্লোগান, “ফেনীর মেয়ে খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা।”

২০০১ সালে তিনি এই আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন তাঁর ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, আর ২০১৮ সালে দণ্ডিত হওয়ায় খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারেননি; সে সময় দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রফিকুল ইসলাম মজনু।

দিনাজপুরে নতুন অধ্যায়

দিনাজপুর-৩ আসনটি সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত।
১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এখানে বিএনপি জয়লাভ করে। প্রথমবার বিজয়ী হয়েছিলেন রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী, পরের দুবার জয় পান খালেদা জিয়ার বড়বোন খুরশীদ জাহান হক।
এই আসনেই এবার প্রথমবারের মতো নিজের জন্মভূমি থেকে প্রার্থী হয়ে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।