জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট দাবিতে প্রয়োজনে ‘আঙ্গুল বাঁকা’ করার হুঁশিয়ারি  : জামায়াত নেতৃত্ব

বৃহস্পতিবার পল্টন মোড়ে বিভিন্ন সমবেত দলের উপস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের দাবি আদায় ব্যর্থ হলে কঠোর কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আমরা আবিষ্কার করব। আমরা এখানো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করবো। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই, বুঝে নিন। নো হাঙ্কি-পাঙ্কি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।”

এ সমাবেশে আট দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন; আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি ও নভেম্বরে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবির স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টাকে প্রদান করা। তাহের বলেন, “জুলাই-অগাস্টের রক্তই হবে শেষ রক্তদান — আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই বিপ্লবের পরে দাবি আদায়ে আর রাজপথে নামতে হবে না। কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি। অল্প সময়ের ব্যবধানেই আমাদের রাজপথে আসতে হয়েছে। আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে রক্ত দেব, প্রয়োজনে জীবন দেব; কিন্তু আমরা জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না।”

তাহের আরও বলেন ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজয় নিশ্চিত হবে এবং জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি পুনরাবৃত্তি করেন। বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হবে নাকি আলাদা দিনে হবে—এই বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতসহ কয়েকটি দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা পরিষদ জরুরি বৈঠক করে দলগুলোর কাছ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা চেয়েছে।

তাহের বলেন, “সময়ক্ষেপণ, এই চালাকি আপনাদের বিপদে ফেলবে। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট আয়োজনের কোনো বাধা নেই। সুতরাং সময় আছে। আরও ১৫ দিন সময়ক্ষেপণ করবেন? করেন, গণভোটের সময় থাকবে।” তিনি অভিযোগ করেন যে, কেউ কেউ বলছেন আলাদা দিনে গণভোট করলে বড় অর্থের অপচয় হবে; কিন্তু তার যুক্তি—একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়েই একটি গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে, এবং যারা চাঁদাবাজিতে জড়িত তারা যদি তা বন্ধ করে দেয়, তবে টাকার অভাব থাকবে না।

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “আমরা শান্তি চাই, সমাধান চাই, আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই। আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই। যদি বুঝতে কষ্ট হয়, তাহলে আসেন, বসি, আলোচনা করি। সরকারও তো আলোচনা করতে বলেছে।” তিনি প্রাণ্যান্ড বলেন আলোচনার চাপ সরকারকেই নিতে হবে এবং আলোচনার রেফারি ভূমিকাটি সরকারকে পালন করতে হবে। জামায়াত ইতোমধ্যে আলোচনা জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে এবং অন্য দলগুলিকেও তাদের কমিটি গঠন করার আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, “সময়ক্ষেপণের পলিসি বাদ দিয়ে আলোচনার পলিসি ঠিক করুন।”

তাহের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও আজ ফোনে পেতে না পারায় পরে আবারও চেষ্টা করবেন বলেও জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন বিএনপিও আলোচনা-পরিবেশ গড়ে তুলবে। একই সঙ্গে তিনি আশপাশের দলের প্রতি অনুরোধ করেন—“আর সময়ক্ষেপণ নয়, আর হিংসে নয়, রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। জাতি মনে করে, শুধু জুলাই সনদ নয়, সব ঠিক করা সম্ভব রাজনৈতিক সমঝোতায়।”

আরেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে তাহের বলেন, তার দল ভোটকেন্দ্র দখলের পদ্ধতি গ্রহণ করবে না—যদি কেউ ওইভাবে আচরণ করে তাহলে তাদের সেই আসনের ভোট বাতিল হবে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে হবে, যেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এমন একাধিক আসন থাকলে সেগুলোকে ভণ্ডুল করে দিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা হবে—এ কথা জাতিকে বলা উচিত।

তাহের আরও বলেন, “কারণ ৫৪ বছরে সঠিক কোনো নির্বাচন আমরা পাইনি। জাতি আর কোনো প্রহসনের নির্বাচনকে মেনে নেবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে দেশ আবার অন্ধকারে যাবে, শেখ হাসিনার যুগে চলে যাবে।” তিনি স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেওয়ার পর যদি দাবি না মানা হয় বা অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে আগামী ১১ তারিখ ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি পালিত হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “আগামী ১১ তারিখ ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী, দাবি আদায়ের ১১ তারিখ। লড়াই হবে। লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই।”

স্মারকলিপি প্রদানকারী দলের পক্ষে জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিন। যদি আপনি সেটা না করেন, তাহলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আপনি যে সম্মান পেয়েছেন তা করতে না পারলে আপনার মর্যাদাকে আপনিই নষ্ট করবেন।” তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা (মুহাম্মদ ইউনূস) দলগুলোর এক টেবিলে বসার আহ্বান দিয়েছেন—এ অবস্থায় রেফারির ভূমিকাটি পালন করা উচিত এবং বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সুষ্ঠু করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

পল্টন মোড়ের এ সমাবেশে অংশ নেয় জড়িত আঠটি দল—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা ৮টি দল আজ যমুনা অভিমুখে অংশগ্রহণ করব। এখন পল্টনে আমাদের অন্যান্য দলের সঙ্গে জড়ো হব। বিভিন্ন রাস্তা থেকে মিছিল আসছে। শৃঙ্খলার সঙ্গে মিছিল নিয়ে পল্টন থেকে যমুনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করব ইনশাআল্লাহ।”

তিনি যোগ করেন, দেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সচ্ছ করার প্রয়োজনে, গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে তাঁরা এই স্মারকলিপি প্রদান করছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিবর্তন করে একটি নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করা হবে—যারা রাজপথে লড়াই করেছেন, তারা আজ একত্র হয়ে এই দাবিগুলো উপস্থাপন করছেন।