রোমান ক্যাথলিক গির্জার নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন আমেরিকান রবার্ট প্রিভোস্ট। প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হলেন তিনি। ইতিহাসে প্রথম আমেরিকান হিসেবে পোপ হলেন প্রিভোস্ট। পোপ হিসেবে তিনি ‘পোপ লিও’ নামে পরিচিত হবেন এবং হবেন পোপ লিও চতুর্দশ।
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া গোপন কনক্লেভের দ্বিতীয় দিনে প্রথম তিন দফা ভোটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না পৌঁছালেও, চতুর্থ দফায় কার্ডিনালরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান। সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি দিয়ে যখন সাদা ধোঁয়া উড়তে থাকে, তখনই বোঝা যায়, নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে অপেক্ষমাণ হাজারো মানুষ সেই সাদা ধোঁয়া দেখে আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন। কেউ লাফিয়ে ওঠেন, কেউ আকাশের দিকে হাত তুলে প্রার্থনায় মগ্ন হন। সেই সময় চার্চের ঘণ্টাধ্বনি বাজে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এক আবেগঘন পরিবেশ। গ্রিস থেকে আসা এক দম্পতি বলেন, “জীবনে একবারই এমন মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া যায়।”
নবনির্বাচিত পোপকে প্রথমে একটি ছোট কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি পরেন পোপের সাদা পোশাক এবং নিজের জন্য বেছে নেন ‘পোপ লিও’ নামটি।
সব প্রস্তুতি শেষে ভ্যাটিকানের প্রধান ব্যালকনিতে এসে এক কার্ডিনাল ঐতিহাসিক বাক্যে ঘোষণা দেন—‘হাবেমাস পাপাম’, যার অর্থ “আমাদের একজন পোপ আছেন।”
এরপর জনতার সামনে হাজির হন নবনির্বাচিত পোপ লিও। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্ম নেওয়া এই পোপ সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের ওপরের ব্যালকনিতে দাঁড়ান। হাজারো মানুষ ‘ভিভা পাপা’ স্লোগানে তাকে শুভেচ্ছা জানায়, যার অর্থ “পোপ দীর্ঘজীবী হোন”।
৬৯ বছর বয়সী পোপ লিও ইতালিয়ান ভাষায় প্রথম ভাষণে বলেন, “আপনাদের সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এটি হল পুনরুত্থিত খ্রিস্টের প্রথম অভিবাদন। আমি এই শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে চাই আপনাদের পরিবারে, আপনাদের সবার কাছে—আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন।”
গত ২১ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু হয়। তার পরেই নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৭ মে শুরু হয় গোপন কনক্লেভ, যার মাধ্যমে নির্বাচিত হলেন নতুন পোপ লিও।
রবার্ট প্রিভোস্টকে একজন সংস্কারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি আর্চবিশপ হওয়ার আগে বহু বছর পেরুতে মিশনারি হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে তাকে একজন ল্যাটিন আমেরিকান হিসেবেও ধরা হয়।
সেন্ট পিটারর্স সিংহাসনের ২৬৭তম অধিকারী হলেন পোপ লিও। ১৯৫৫ সালে শিকাগোতে জন্ম নেওয়া প্রিভোস্ট ছোটবেলায় যাজকের সহকারী ছিলেন। ১৯৮২ সালে যাজক নিযুক্ত হওয়ার পর ১৯৮৫ সালে পেরুতে চলে যান, যদিও নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন যাজকের কাজের অংশ হিসেবে। তার পেরুর নাগরিকত্ব রয়েছে।
২০২৩ সালে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস তাকে ‘পন্টিফিক্যাল কমিশন ফর ল্যাটিন আমেরিকা’র প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি উঠে আসেন বিশিষ্ট এক অবস্থানে।