আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি চলছে

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন বিক্ষোভকারীরা। শুক্রবার বিকাল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ জুলাই অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।

‘ব্যান, ব্যান, আওয়ামী লীগ’সহ বিভিন্ন স্লোগানে মুখর শাহবাগ মোড়ে রাত ১০টা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।

এর আগে বিকালে মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। সমাবেশ থেকে শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে ফেইসবুকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন হাসনাত। এরপর শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভকারীরা মিন্টো রোডে সমাবেশ করেন। সেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

সমাবেশে হাসনাত বলেন, “ইন্টেরিমের কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই আমরা সমাবেশস্থল থেকে শাহবাগ অবরোধে যাচ্ছি। দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান করব।”

তিনি আরও বলেন, “১০০টা ফেরাউন একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে কেন রাজনৈতিক দল বলা হয়? ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত লেগে আছে। আর নয়, আওয়ামী লীগ নামক ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে থাকতে চাই না।”

শাহবাগ অবরোধ চলবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। হাসনাত বলেন, “আমরা সবাইকে একত্রিত করতে এই জমায়েত করেছি। এখান থেকে গিয়ে আমরা শাহবাগ অবরোধ করব।”

সমাবেশে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদিসহ অনেকে বক্তব্য দেন।

বিকাল ৪টার পর আন্দোলনকারীরা শাহবাগের দিকে এগোতে থাকলে শাহবাগমুখী সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দেয়।

সরজমিনে দেখা যায়, অবরোধ চলাকালে শাহবাগ মোড় থেকে কাঁটাবন মোড়, মৎস্য ভবন, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আটকে থাকা মোসাদ্দেক আলী নামে এক প্রাইভেট কারচালক বলেন, “তীব্র যানজটের কারণে সামনে-পেছনে কোথাও যেতে পারছি না। সন্ধ্যা থেকে যানজটে আটকে আছি।”

অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলমাস হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বো না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেই ফিরবো।”

এদিকে সরকারের অবস্থান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে।”

এতে আরও জানানো হয়, সরকার ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার ‘জনদাবির’ প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। চলমান তদন্তে সহযোগিতা না করে আওয়ামী লীগ দেশের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”