সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় সাত বছরের সাজা পাওয়া সাংবাদিক শফিক রেহমানের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে।
শুনানিতে মামলাটিকে ‘হয়রানিমূলক’ আখ্যায়িত করে শফিক রেহমানের খালাস চেয়েছেন তার আইনজীবী। খালাস আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আপত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। রায়ের তারিখ পরে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজের আদালত।
রোববার শফিক রেহমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। তিনি বলেন, “হাসিনাপুত্র জয়কে কথিত অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা এটি। ভিকটিম নিজে মামলা দায়ের করেনি, পুলিশ অতিরিক্ত ইন্টারেস্টে মামলা করেছে। ৯০ বছর বয়সী ব্যক্তিকে এ মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। মামলায় ১২ জন সাক্ষী দিয়েছেন। জয়ও সাক্ষ্য দিয়েছেন। যেদিন জয় সাক্ষ্য দেয়, বিচারক তার পিছু পিছু দৌঁড়ান। তখনই বোঝা যায় বিচার কেমন হয়েছে।”
এই মামলায় যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান ছাড়াও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ আরও চারজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তারা হলেন- জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। এদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান খালাস পেয়েছেন।
মামলাটিকে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ উল্লেখ করে শফিক রেহমানের আইনজীবী বলেন, “তার খালাসের প্রার্থনা করছি।”
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ খলিলুর রহমান (খলিল) বলেন, “রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা। তিনি (শফিক রেহমান) একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। খালাস দিলে আমাদের আপত্তি নেই।”
শুনানিতে শফিক রেহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় ২০২৩ সালের অগাস্টে শফিক রেহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০১৬ সালে তিনি পাঁচ মাস কারাবন্দি ছিলেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যান।
ছয় বছর পর গত ১৮ অগাস্ট দেশে ফেরেন শফিক রেহমান। এরপর গত ২১ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিল দায়ের করেন এবং আদালত তার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করেন।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, “আমরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করি এবং সাজার বিরুদ্ধে আপিল করি। আদালত ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন এবং আপিল গ্রহণ করেন।”
জামিন পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শফিক রেহমান বলেন, “এখানে একজন অনঅভিপ্রেত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যার নাম সজীব ওয়াজেদ জয়। আমি তার নাম উচ্চারণ করতে চাইছিলাম না। তার অপহরণ মামলায় আমি আজ এখানে।”
তথাকথিত মামলা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেটা নিউ ইয়র্কে ডিসমিস করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কে বলে দেওয়া হয়েছে এই মামলায় শফিক রেহমানের নাম যেন কোথাও না থাকে। আমেরিকায় যেখানে ১০ হাজার মাইল দূরে মামলা হয়েছিল, সেখানে আমার নাম নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আপনাদের আমি চ্যালেঞ্জ দিতে চাই। খুঁজে বের করুন সজীব ওয়াজেদ জয় কীভাবে এবং কেন আমেরিকা যেতে হয়েছিল। খুঁজে বের করুন আব্দুল আওয়াল মিন্টুর বাসার সামনে মধ্যরাতে জনতা ব্যাংকের এক স্টাফ কীভাবে পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিল। কে গাড়ি চালাচ্ছিল এবং সে এখন কোথায় আছে, খুঁজে বের করলে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।”