আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ তুলে এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
রোববার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালাস পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রাজধানীর শাহবাগ থানার ওই মামলায় আমীর খসরুসহ পাঁচজনকে খালাস দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা। বিগত বছরগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন কোর্টে সময় দিতে হত। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে কতদিন লাগবে জানি না। আজকে একটি মামলার রায় হয়েছে, আরও অনেক মামলা বাকি আছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে শুধু আমি না, বিএনপির ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। তাদের জেলে নেওয়া হয়েছে, গুম-খুন করা হয়েছে, বাড়ি ছাড়তে হয়েছে, চাকরি-ব্যবসা হারাতে হয়েছে।”
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা প্রশ্ন রাখেন, “এই লোকগুলোর কী হবে? তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে? রাষ্ট্র কী এগুলোর ক্ষতিপূরণ দেবে? তাদের সম্পর্কে তো কোনো কথা শুনতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্রের আন্দোলনের যারা মূল ভিত্তি সৃষ্টি করেছিল, তাদের কোনো খবর নেওয়া হচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত দিনে যারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এ জায়গায় এনেছে, ১৫/১৬ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করেছে, সবকিছু হারিয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। আমার মনে হয়, বিষয়টি আমাদের সকলের ভাবা দরকার।”
কেমন বিচার বিভাগ দেখতে চান– জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, “মুক্ত বিচার বিভাগ, স্বাধীন বিচার বিভাগ। বিচারের নামে যে প্রহসনে লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে, জীবন হারিয়েছে, জেলে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে, পুলিশ হেফাজতে নিহত হয়েছে, এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র টিকতে পারে না।”
বিচার বিভাগের স্বাধীন সচিবালয় গঠনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা আমাদের প্রস্তাব। এখন যদি বাস্তবায়ন না হয়, আমাদের সময় আমরা অবশ্যই বাস্তবায়ন করব।”
এ মামলায় খালাস পাওয়া অন্য চারজন হলেন– ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমী, মো. রফিকুল ইসলাম নয়ন, হাবিবুর রহমান হাবিব ও রবিউল ইসলাম রবি।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব বাসচাপায় নিহত হন। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমীর খসরুর একটি কথিত ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে। পরে ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ৫ অগাস্ট শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন ডিবি পুলিশের তৎকালীন পল্লবী জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মো. শামীম আহমেদ।
মামলায় আমীর খসরু ও ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করা হয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে তখনকার ছাত্র আন্দোলনে ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ এনে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি আমীর খসরুসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান।
২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত আদালত আসামিদের সবাইকে খালাস দেন।