আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমন সংক্রান্ত অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুলে দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে।

শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম, ‘সাইবার স্পেস’সহ, বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আইন উপদেষ্টা জানান, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২৩ অক্টোবর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকেও একই আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করে সরকার।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের তিন দিন পর এই সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।

জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে শনিবারের বৈঠকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে আসিফ নজরুল বলেন, সংশোধনের ফলে ট্রাইব্যুনাল এখন রাজনৈতিক দল, তাদের অঙ্গসংগঠন কিংবা সমর্থক গোষ্ঠীকেও শাস্তি দিতে পারবে।

বৈঠকের বিবৃতিতে বলা হয়, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সুরক্ষার স্বার্থে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের খবর পাওয়ার পর শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা উল্লাস প্রকাশ করেন এবং স্লোগান দেন, “এ মুহূর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো।”

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন।
পরদিন শাহবাগে টানা দুই দিন অবরোধ পালন করা হয়, যার মধ্যে শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এই জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রাত সাড়ে ৮টায় যমুনা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে শুরু হওয়া বৈঠক চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
সভায় অর্থ, পরিকল্পনা, আইন, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, শিল্প, বিদ্যুৎ, পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, মৎস্য, ধর্ম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, তথ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজকল্যাণ এবং প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর মিন্টো রোডের প্রবেশমুখে একটি মঞ্চ নির্মাণ করে আয়োজিত সমাবেশে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন।
শনিবার বিকালে সেখানে অনুষ্ঠিত গণজমায়েতে আবারও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।

শাহবাগে অবস্থানের কারণে শুক্রবার বিকাল থেকে রাজধানীর ব্যস্ততম এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শনিবার রাজধানীর শনির আখড়া ও শ্যামলীর শিশু মেলা এলাকাতেও একই দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *