সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘অসীম’ ক্ষমতা থাকায় ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ তৈরি হওয়া অনিবার্য ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ‘প্রত্যেকটা অংশ’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। রোববার ঢাকার মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর সমালোচনা করে তিনি এ কথা বলেন।
সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষক বলেন, “সংবিধানের মধ্যে এমন ব্যবস্থা আছে, যেখানে নির্বাহী বিভাগের কোনো রকম জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই, প্রধানমন্ত্রীর হাতে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটা অনিবার্য ছিল যে একটা ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি হবে।”
১৯৯১ সালের সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যখন সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রবেশ করে তখন একটা ভয়াবহ কাণ্ড হয়েছিল, ৭৫ সাল থেকে চতুর্থ সংশোধনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে যে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, সেই ক্ষমতার প্রত্যেকটা অংশ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তির আধিপত্য সবকিছু মিলেই এই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি হয়েছে।”
সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের পক্ষে নিজের মত তুলে ধরেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, “জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া একটা সংবিধানের মৌলিক সংস্কার করা সম্ভব নয়, নতুন সংবিধানতো প্রশ্নই আসে না। সে কারণে আমরা প্রস্তাব করেছিলাম সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন।”
সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, “সংস্কারের যেসব প্রশ্নে আমরা একমত সেগুলো নির্ধারণ করা জরুরি। পথরেখাও জরুরি, সেটা নিয়ে রাজনীতি চলছে। রাজনৈতিক মাঠে কিন্তু পথরেখাটাই সামনে আসে।”
আয়োজনের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী ও নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-আহ্বায়ক শহিদুল আলম। অনুষ্ঠানে সংবিধান সংস্কার নিয়ে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, এসব প্রস্তাব কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ ও লেখক জিয়া হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনডিএম সভাপতি ববি হাজ্জাজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অনেকে।