ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাকর্মীরা।
বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখার আয়োজনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। শুরুতে জনা পঞ্চাশেক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকলেও পরে সংখ্যা বাড়তে বাড়তে শতাধিক হয়।
এনসিপির কলাবাগান প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, “বর্তমান ইসি প্রশ্নবিদ্ধ, অবৈধ আইনে গঠিত হয়েছে। আমরা এ ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানাই।”
সঙ্গে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিও তোলেন তিনি।
এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবু আবদুল্লাহ বলেন, “অবৈধ উপায়ে গঠিত এ ইসি মেনে নেব না।”
পল্লবী থানা প্রতিনিধি রেহানা আক্তার রুমা বলেন, “আমরা বাধ্য হয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। এ ইসির পরিবর্তন চাই।”
রমনা থানা শাখার প্রতিনিধি ডা. ইশরাত জাহান বলেন, “আমি একজন মা হয়ে এখানে এসেছি। বড় দলগুলোর ব্যর্থতায় আমরা এনসিপিতে এসেছি। এ ইসিকে ধিক্কার জানাই, তারা একটি বড় দলকে পক্ষপাত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “পদত্যাগের দাবিতে প্রয়োজনে আমরা মায়েরা বসে যাব।”
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকদের চলমান অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে এনসিপি এই বিক্ষোভ করে।
মিরপুর মডেল থানার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, “আজ সারাদেশের মানুষের একই দাবি—ইসি পদত্যাগ ও পুনর্গঠন।”
তিনি বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এজন্য ইসিকে বিদায় নিতে হবে।”
এনসিপির নেতারা বলেন, ২০২২ সালের আইনে গঠিত এএমএম নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তারা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন ইসি গঠনের দাবি জানান।
গুলশান প্রতিনিধি নূরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, “দাবি আদায় করতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।”
উত্তরা পূর্ব থানার প্রতিনিধি মাহিন সরকার বলেন, “এ ইসি হাসিনা সরকারের মতো আচরণ করছে। আগে স্থানীয় নির্বাচন দিন, পরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা হবে।”
তিনি বিএনপিরও সমালোচনা করে বলেন, “১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার সরাতে পারেনি, এখন রাজনীতির ভাষায় কথা বলছে।”
হাতিরঝিল প্রতিনিধি জিয়াউল হুদা বলেন, “নির্বাচন ভবনে এমন লোকজন আছে, যারা নতুন করে পরিস্থিতি অস্থির করার চেষ্টা করছে। এ ইসিকে সতর্ক করছি—পদত্যাগ করুন অথবা নিরপেক্ষতা প্রমাণ করুন।”
রূপনগর প্রতিনিধি তৌহিদুর রহমান বলেন, “আমরা রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনে আবার দেব। আমরা মাথা নত করব না, ইসির পদত্যাগ চাই।”
মিরপুর মডেল থানার প্রতিনিধি রাসেল খন্দকার বলেন, “দক্ষিণের মানুষ সেবা পাচ্ছে না। জনপ্রিয়তা থাকলে স্থানীয় নির্বাচনে আসুন।”
ধানমন্ডি থানা প্রতিনিধি জসিম নায়েদ বলেন, “দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। মানুষ সেবা পাচ্ছে না, তাই স্থানীয় নির্বাচন প্রয়োজন।”
গেণ্ডারিয়ার প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম বলেন, “নতুন বাংলাদেশে পক্ষপাতিত্ব চলবে না।”
আরেক প্রতিনিধি কামরুল হাসান বলেন, “হাসিনাকে উৎখাত করেছি, আপনাদের ১৫ সেকেন্ডও লাগবে না, পালাবেন কোথায়?”
মোহাম্মদপুরের আবু সুফিয়ান বলেন, “গণদাবি হলো—নতুন ইসি গঠন করতে হবে। অবৈধ নির্বাচনের মেয়র বৈধ হয় কীভাবে?”
কেন্দ্রীয় সদস্য আল আমিন টুটুল বলেন, “জন ভোগান্তির আন্দোলন করে জনগণকে পাশে পাবেন না। আমরা স্থানীয় নির্বাচন চাই, যাতে সবাই নাগরিক সুবিধা পায়।”
খিলক্ষেতের তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান ইসি কখনো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। ইশরাক অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।”
শাহরিয়ার শুভ বলেন, “নীলনকশা চলছে, ইসি বিএনপির হয়ে কথা বলছে। এমন পক্ষপাত থাকলে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়, এখন স্থানীয় নির্বাচন দরকার।”
এনসিপির নেতাকর্মীরা ‘হাসিনার কমিশন মানি না মানবো না, এখন চাই স্থানীয় সরকার’ স্লোগান দেন।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকে নির্বাচন ভবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়। ভবনের সামনের রাস্তায় কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেওয়া হয়।
পুলিশ ছাড়াও কোস্ট গার্ড, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির ইশরাক হোসেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন।
২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে, তবে এখনও তার শপথ হয়নি।
এই গেজেটের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলছে এনসিপি। ইশরাক সমর্থকদের নগর ভবনে অবস্থানের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে এনসিপি।