চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগের আলোচনা, পুঁজিবাজারে ‘নির্মোহ’ সংস্কারের ইঙ্গিত

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিন দেশের তিনটি কোম্পানির সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

রোববার রাজধানীতে পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত “সিএমজেএফ-টক” অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা গভীর সংস্কার করতে চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি যেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানি বন্দর ব্যবস্থাপনা করতে পারে। এজন্য আমরা বিদেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। দুবাই পোর্ট ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কথা বলছি; এপি মুলার মার্কসের সঙ্গে কথা বলছি এবং পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে কথা বলছি। ফলে যেটা হবে, ওরা যদি ম্যানেজ করেন, তাহলে আমাদের বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে।”

প্রেস সচিব আরও বলেন, “আমরা বন্দর কাউকে দিচ্ছি না। বন্দরে যেন তারা বিনিয়োগ করেন, ম্যানেজ করেন। এখন পর্যন্ত আমরা তাদের কাছ থেকে রেসপন্স পেয়েছি যে, তারা তিন বিলিয়ন ডলারের মতো বিনিয়োগ করবে।”

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এফডিআই আসা শুরু হয়েছে। জুনে দেখবেন যে, চীন থেকে একজন কমার্স মিনিস্টারের নেতৃত্বে ১৫০ জনের মতো চাইনিজ বিনিয়োগকারী আসবেন। তারা যদি বাংলাদেশে আসেন, আমরা কর্মসংস্থানে যে প্রবৃদ্ধি চাচ্ছি, সেটা খুব দ্রুত হবে।”

এনবিআরকে দুটি ভাগে ভাগ করা সরকারের অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ট্যাক্স কালেকশনটা সবসময় কম ছিল, এখন বাড়বে।”

সিএমজেএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

সংলাপে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “কোনো গোষ্ঠীতন্ত্রের কাছে বাজারকে জিম্মি করে রাখতে দেবে না সরকার। আগে তো সব পলিসি করা হত কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে। এভাবে লুট করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে। এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেবল প্রতারণার শিকার হয়েছেন, পুঁজি হারিয়েছেন।”

বিতর্ক এড়াতে ও বিশ্বমানের বাজার গড়ে তুলতে সরকার বিদেশি পরামর্শকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই কাজে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে বিএসইসিতে বা বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের যে রিফর্মগুলো যারা করেছেন, তারা সবাই গোষ্ঠী স্বার্থের দিকে তাকিয়েছেন। এই গোষ্ঠীটা একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে।”

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই মিটিংয়ে এই ধরনের আলোচনা খুব জোরালোভাবে এসেছে যে, আমরা কেন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। কারণ হচ্ছে, পুরো শেয়ার মার্কেটটা হয়ে গেছে ডাকাতদের আড্ডা। পুঁজিবাজারে এক ডাকাত গেলে আরেকটা ডাকাত আসছে।”

তিনি বলেন, “এই রিফর্মটা যারা করবেন, তারা গোষ্ঠী স্বার্থের অনেক দূরের লোক। তারাই এসে নির্মোহভাবে সংস্কার করবেন। পুরো বিশ্বেই শেয়ার মার্কেটে গভীর রিফর্ম হয়, ভালো জায়গায় যায়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, যারা রিফর্ম করতে চান, তারা আরেকটা ধান্দাবাজ গ্রুপ।”

দেশি-বিদেশি পরামর্শকরা সংস্কার বাস্তবায়ন করলে দেশের পুঁজিবাজার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। “কোনো গোষ্ঠী যেন মনে না করেন, এখান থেকে আমি আমার মতো করে টাকা বানাব। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করবে সরকার।”

দুই সপ্তাহ আগে বিনিময় হার বাজারমুখী করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারপরও টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। এতে বোঝা যায়, সংস্কার ভালো সংকেত দিচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *