নারী কমিশন নিয়ে আক্রমণ দুঃখজনক, সরকারের স্পষ্ট অবস্থান চান গীতি আরা নাসরিন

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।

রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এ শিক্ষক বলেন, “কমিশন হয়েছে, যারা অন্তর্বর্তী সরকার তারাই কমিশন গঠন করেছেন। এরকম একটি কমিশনকে সরাসরি আক্রমণ করা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না। তখন কিন্তু আশাবাদী থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়।”

অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন খাতে ১১টি সংস্কার কমিশন করে। এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ রয়েছে।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই এসব সুপারিশ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। কথা ওঠে নারী কমিশন নিয়েও। দেশের ইসলামপন্থিদের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হেফাজতে ইসলাম নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে, জামায়াতে ইসলামীও কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি মনে করে, কিছু সুপারিশ ধর্ম ও নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পাল্টা বিবৃতি এসেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও ১১০ নাগরিকের তরফে। বিবৃতিতে এই নাগরিকরা বলেছেন, সরকারকে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে এবং কমিশনকে সমর্থন ও সুরক্ষা দিতে হবে।

গীতি আরা নাসরিন বলেন, “তাদের সরাসরি আক্রমণ করা হচ্ছে। ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু একটি কমিশন তৈরি হয়েছে। তারা একই পরিশ্রম করে সবার মতামত নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার পর বলা হয় সেই কমিশন বাতিল করতে হবে। তখনই প্রশ্ন জাগে যে আমরা স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করারও একটি পরিসর তৈরি করতে পারছি না।”

তিনি বলেন, “বিতর্ক থাকতেই পারে, প্রশ্ন উঠতেই পারে, সেটি যে কোনো কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে। কিন্তু উপেক্ষা করা হচ্ছে, আক্রমণ করা হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও আমরা এখনও দেখিনি—এখন যারা সরকারে আছেন, তারা এটি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেছেন যে এটি করা যাবে না।”

সাধারণ জনগণের মতামত ও তাদের নিরাপত্তাকে কোন চোখে দেখা হচ্ছে, তা নিয়ে ‘উদ্বেগ’ রয়েছে এ অধ্যাপকের।

গীতি আরা নাসরিন বলেন, “প্রথমতই আমি নারীদের বিষয়টি বলব, কারণ এই প্রান্তিকতা আমরা শুরু থেকেই লক্ষ্য করছি। পুরো অভ্যুত্থানে যে বিপুল নারীদের আমরা দেখেছি, এরপরে সব জায়গায় এমনকি কমিশনগুলোতেও তাদের ভয়াবহ প্রান্তিকতা দেখতে পেয়েছি। শুধুমাত্র নারী কমিশন বাদে সব জায়গায় নারীর প্রতিনিধিত্ব কম।”

নারীদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও স্পষ্ট করার দাবি জানান তিনি।
“আমি রাজনৈতিক দলের কাছে স্পষ্ট করে শুনতে চাই, নারীদের ওপর যে বৈষম্য আছে তারা এগুলোর বিষয়ে কী অবস্থান নেবে। পরিষ্কারভাবে তাদের ঘোষণা দিতে হবে নারী বিষয়ে তারা কী অবস্থান নেবে। তাদের সঙ্গে আলোচনায় আসতে হবে।”

মনোনয়নে ৩৩% নারী চান সামিনা
নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।

রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা একটি অসাধারণ সময় ও সুযোগ পার করছেন বলে মনে করেন তিনি।
এই শিক্ষক বলেন, “নারীরা রাজনীতি আসতে চাইছেন, তাদের সে সুযোগটা করে দিতে হবে। এ কারণে তারা দাবি করছেন, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী দিতে হবে।
“রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আবার নির্বাচনপদ্ধতিতে নারীদের অংশগ্রহণে আগ্রহী করার প্রক্রিয়া থাকতে হবে।”

ঢাকায় খামারবাড়ি এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে আরও ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট আ ন ম মুনীরুজ্জামান, ওয়ারেসুল করিম, আশরাফুন নাহার মিষ্টি, চৌধুরী সামিউল হক, মির্জা হাসান, ইলিরা দেওয়ান, সাইদা সুলতানা রাজিয়া, বাসুদেব ধর, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, বিচারপতি এম এ মতিন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *