জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে বাছাইকৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বিষয়ে জনগণের মতামত নিতে জরিপ পরিচালনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালিত হতে পারে। তবে জরিপটি কবে ও কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
আলী রীয়াজ বলেন, যেসব সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে জনগণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যেই এই জরিপ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। আর রাজনৈতিক দলগুলোই ঠিক করবে এ প্রক্রিয়া কীভাবে এগোবে।
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিগগিরই দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু হবে বলেও জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, মে মাসের শেষ কিংবা জুনের শুরুতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি বা দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনার ভিত্তিতে কমিশনের কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি জানাতেই সোমবারের এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ওই বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এই কমিশনগুলো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়।
এরপর চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার। এই কমিশনের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে এবং তাদের মেয়াদ ছয় মাস নির্ধারণ করা হয়।
কমিশন ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নির্বাচন করে তা স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৭০টি সুপারিশ ছিল সংবিধান, ২৭টি নির্বাচন ব্যবস্থা, ২৩টি বিচার বিভাগ, ২৬টি জনপ্রশাসন এবং ২০টি দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত।
কমিশন ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানায়, যদিও কিছু দল সময় বৃদ্ধির আবেদন করে। পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষ থেকে মতামত পাওয়া যায়। অনেক দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত বিশ্লেষণও জমা দেয়।
২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করা হয়। এসব আলোচনার মাধ্যমে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ বা আংশিক ঐকমত্য গড়ে উঠেছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।