কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সোনাতলা মসজিদের পাশের একটি তিনতলা ভবনে অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সুব্রত বাইনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার ভোরে চালানো এই অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
অভিযানে সুব্রত বাইনের সঙ্গে আটক অপর ব্যক্তি ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মোল্লা মাসুদ বলে কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, “শোনা যাচ্ছে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে আমাদের অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি।”
অভিযানের সময় ভবনের দোতলা ও তিনতলায় থাকা শিক্ষার্থীদের মেসে সেনাবাহিনী প্রবেশ করেনি। নিচতলায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন সেখানে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা।
একজন শিক্ষার্থীর ভাষ্য অনুযায়ী, দেড় মাস আগে ওই নিচতলাটি ভাড়া নেওয়া হয় একজন স্থানীয় নারীর মাধ্যমে। সেখানকার বাসিন্দারা গ্রামে ঘুরে কাপড় বিক্রি করেন বলে জানতেন আশপাশের মানুষ।
অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে আরেক শিক্ষার্থী জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনী আসে। সে সময় সব ছাত্র একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অভিযান পরিচালনা করে এবং পরে দুজনকে একটি গাড়িতে করে নিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, “না আমরা ছিলাম না, আমাদের জানায়নি। আগে-পরে কিছুই জানায়নি। জেলখানার মোড় থেকে পিছনের দিকে সোনাতলা মসজিদের পাশেই এই ব্যাচেলর বাসাটি। তিনতলা ভবনটির উপরে ছাত্ররা মেসে থাকত, অভিযানে নিচতলা থেকে দুজনকে আটক করা হয়।”
পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বহু অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মাধ্যমে তার সন্ত্রাসী জীবনের সূচনা ঘটে।
২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে, তাদের মধ্যে ঢাকার কুখ্যাত ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের প্রধান সুব্রত বাইনও ছিলেন।
২০০৩ সালের দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর কলকাতার কারাইয়া এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন সুব্রত।
ভারতে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়। ওই মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি ফের আত্মগোপনে চলে যান।
পরবর্তীতে একই বছরের সেপ্টেম্বরে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের ধাওয়ায় পালিয়ে নেপালের কাকরভিটা শহরে আশ্রয় নেন এবং সেখানে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রায় তিন বছর পর ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর নেপালের কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ খুড়ে পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি।
এর কিছুদিন পর ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজার এলাকা থেকে ভারতীয় পুলিশ তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করে। তখন তিনি ফতেহ আলী নাম ধারণ করে ছদ্মবেশে বসবাস করছিলেন।