সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন বিরতির পর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ফের নগর ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।
রোববার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে ডিএসসিসির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কদমতলী ৫২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম দীপুর নেতৃত্বে শখানেক নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছেন।
নগর ভবনের সবগুলো গেটে তালা ঝুলিয়ে দাবি আদায়ে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। তারা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগও দাবি করেন।
বিএনপির সভাপতি দীপু বলেন, “ইশরাক হোসেন জনতার মেয়র। তার শপথ নিয়ে সরকার টালবাহানা করে অন্যায়ের আশ্রয় নিচ্ছে। আদালত অবমাননা করছে। আমরা শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সঙ্গে আছি। জনতার মেয়রকে শপথ না পড়ানো পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।”
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “রায়ও এসেছে, রিটও খারিজ, আর কিসের জন্য অপেক্ষা? সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব দিচ্ছে না।”
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ইশরাকের সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। টানা আন্দোলনের কারণে সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ রয়েছে।
নাগরিক সেবায় যে ধরনের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে, তার জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে দায়ী করেছেন ইশরাকের সমর্থকরা।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে তাকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।
তবে ১৪ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ হাই কোর্টে রিট করেন, যাতে তাকে শপথ না পড়ানো হয়।
সেদিনই ইশরাকের সমর্থকরা শপথের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা দুই সপ্তাহ ধরে চলমান। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনি জটিলতার কথা বলে এখনো শপথের ব্যবস্থা করেনি।
এই অবস্থায় হাইকোর্ট ২২ মে মামুনুর রশিদের রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেয়। রিটকারীর এ ধরনের রিট করার এখতিয়ার না থাকার যুক্তিতে তা খারিজ হয়।
পরবর্তীতে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন এবং শপথ স্থগিতের আবেদন করেন। বৃহস্পিতবার সেই শুনানি শেষে আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ আবেদন নিষ্পত্তি করে।
সর্বোচ্চ আদালত এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলে, কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি।
এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাওয়া নিয়েও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে আদালত জানায়, সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রণালয়কে কমিশনকে সাহায্য করার কথা, উল্টো মতামত চাওয়া অনুচিত।
তবে এ পর্যবেক্ষণের পরও এখনো স্পষ্ট নয়, ইশরাক হোসেন মেয়রের দায়িত্ব পাবেন কি না।