মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ মিশুকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ৬৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মামলায় মিশুক ছাড়াও ‘নগদ’-এর আরও আটজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন—নির্বাহী পরিচালক মো. সাফায়েত আলম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নমিনি পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক, সিনিয়র ম্যানেজার মারুফুল ইসলাম ঝলক, চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) মো. আবু রায়হান, চিফ ফাইন্যান্স অফিসার (সিএফও) আফজাল আহমেদ, হেড অব ফাইন্যান্স মো. রাকিবুল ইসলাম, চিফ কমার্শিয়াল অফিসার (সিসিও) শিহাব উদ্দিন চৌধুরী এবং হেড অব বিজনেস ইন্টেলিজেন্স গোলাম মর্তুজা চৌধুরী।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ‘ট্রাস্ট-কাম-সেটেলমেন্ট’ হিসাবে প্রকৃত নগদ অর্থের তুলনায় অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৭৫৮ টাকা ৯০ পয়সা ই-মানি ছাড়া হয়। এরপর এই ই-মানি অনুমোদনহীন ৪১টি পরিবেশকের মাধ্যমে ‘ফেরত’ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।
মামলায় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪৭৭ক এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, এই অপরাধের নেতৃত্ব দেন তানভীর আহমেদ মিশুক, মো. সাফায়েত আলম, মোহাম্মদ আমিনুল হক ও মারুফুল ইসলাম ঝলক। তারা পরিকল্পিতভাবে পাঁচ সহযোগী—মো. আবু রায়হান, মো. রাকিবুল ইসলাম, আফজাল আহমেদ, শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ও গোলাম মর্তুজা চৌধুরীর সহায়তায় হিসাবপত্রে জালিয়াতি করে মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করেন।
এই প্রতিবেদন ব্যবহার করে অতিরিক্ত ই-মানি ছাড়া এবং তা অনুমোদনহীন পরিবেশকের মাধ্যমে তুলে আত্মসাৎ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, সহায়তাকারী পাঁচ কর্মকর্তা ‘নগদ লিমিটেড’-এর প্রোডাকশন সিস্টেমে অনুমোদন ছাড়াই ৪১টি পরিবেশকের তথ্য যুক্ত করেন। এরপর প্রোডাকশন ডেটাবেইজ থেকে বিআই পোর্টাল ও বিপিও পোর্টালে ডেটা স্থানান্তর করে কাস্টমাইজড রিপোর্ট তৈরি ও সরবরাহ করা হয়। এসব রিপোর্টের ভিত্তিতে আত্মসাৎ করা হয় অর্থ।
ঘটনাস্থল হিসেবে মামলায় ‘নগদ লিমিটেড’-এর প্রধান কার্যালয় (আগের নাম: থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড), ৩৬, ডেলটা ডালিয়া, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, বনানী, ঢাকা—এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্থান উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও তানভীর আহমেদ মিশুকসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়।
সেই মামলায় বলা হয়, ২০২৩ সালের ২১ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ‘নগদ’-এর কার্যক্রম পরিদর্শন করে এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ‘ট্রাস্ট-কাম-সেটেলমেন্ট’ হিসাবে ছাড়কৃত ই-মানির বিপরীতে ১০১ কোটি টাকার বেশি রিয়েল মানির ঘাটতি শনাক্ত করে।