রাখাইনে মানবিক করিডর চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে করিডর ব্যবহারের অনুরোধ করেছিল জাতিসংঘ। এর পরিপ্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে রাখাইনে মানবিক করিডর চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তিনি জানান, “নীতিগতভাবে আমরা সম্মত হয়েছি। এটি একটি মানবিক সহায়তার করিডর হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলো পূরণ হলেই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।”

করিডর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে; কোনো অস্ত্র পরিবহন হবে না।

সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে জানিয়েছে, রাখাইনের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে করে রাজ্যটিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে শুধু রোহিঙ্গা নয়, রাখাইনের অন্যান্য জনগোষ্ঠীও সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।

গত বছর অক্টোবরে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একটি প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক অবনতির বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ থাকায় পণ্য প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে, বাসিন্দাদের আয়ের উৎস নেই, মূল্যস্ফীতি চরমে, খাদ্য উৎপাদন ধসে পড়েছে এবং জরুরি সেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে করে মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বে মানবিক করিডরগুলো সাধারণত নিরাপত্তাঝুঁকিমুক্ত থাকে না। করিডর দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের সহায়তা দেওয়া হলেও বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এসব করিডর ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশের জন্য করিডরটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাঁদের মতে, রাখাইনে আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার সব সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ পাঠানো হবে, তা বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে নাকি আরাকান আর্মির হাতে পড়বে, তার নিশ্চয়তা নেই।

এছাড়া, রাখাইন অঞ্চল আন্তর্জাতিক মাদক ও অবৈধ অস্ত্র পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। করিডর চালু হলে এসব অপরাধের ঝুঁকি বাড়বে। মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন না থাকায় অস্বীকৃত গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো দর–কষাকষি করাও আলাদা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করিডর চালু নিয়ে সরকারি পর্যায়ে ভিন্নমত রয়েছে। তবে জাতিসংঘের ধারাবাহিক অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মানবিক করিডরের জন্য শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে, জাতিসংঘের উচিত ছিল প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *