ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়েছে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এখন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক নেতৃত্ব, পরমাণু বিজ্ঞানী, সামরিক স্থাপনা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা চালালেও উপগ্রহের চিত্র বলছে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েনি। ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির পরমাণু বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট বলেন, “ফোরদো বা ইস্ফাহানে দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি নেই। নাতাঞ্জে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তবে ভূগর্ভস্থ স্থাপনাটি ধ্বংস হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ নেই।”
জাতিসংঘের আনবিক শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, নাতাঞ্জের পাইলট সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং বৈদ্যুতিক কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় সেন্ট্রিফিউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। তবে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
নাতাঞ্জ ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যার একটি অংশ ভূগর্ভে এবং একটি অংশ মাটির উপরে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “কেউ জানে না ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আদৌ আছে কি না, তবে এটা ছিল এক বিধ্বংসী আঘাত।”
শুক্রবারের হামলায় অন্তত ২০ জন সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দুটি আঞ্চলিক সূত্র। ছয়জন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করেছে ইরান।
অলব্রাইট বলেন, স্থাপনাগুলোর টানেলে ড্রোন বা সাইবার হামলা হতে পারে, যা উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়ে না। “প্রথম দিনের লক্ষ্য ছিল চমক দেওয়া, নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া, এরপর বিজ্ঞানী, তারপর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। হামলা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে,” বলেন তিনি।
ইসরায়েল জানায়, তারা ‘রাইজিং লায়নস’ নামে এক অভিযানের শুরু করেছে, যা কয়েক দিন চলতে পারে এবং তেহরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নষ্ট করাই এর লক্ষ্য।
অলব্রাইট বলেন, ইরানের কাছে কত ইউরেনিয়াম মজুত আছে তা অজানা। ইসরায়েল হয়তো আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের উপস্থিতি বিবেচনায় বড় হামলা থেকে বিরত ছিল। ভূগর্ভস্থ সেন্ট্রিফিউজ বন্ধ করতে গেলে ব্যাটারির সাহায্য লাগে, তবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বন্ধ হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে।
জেফরি লুইস, যিনি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধে কাজ করেন, বলেন, নাতাঞ্জে ‘মাঝারি ধরনের’ ক্ষতি হয়েছে। পাইলট সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ভবনগুলো ধ্বংস হয়েছে, তবে ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রটি অক্ষত।
ফোরদোর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই স্থাপনাটি সবচেয়ে নিরাপদ বলে ধরা হয় এবং এটি খুব গভীরে অবস্থিত। থিংকট্যাঙ্ক প্রধান মার্ক ডুবোউইটজ মনে করেন, ফোরদো ধ্বংসে ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভব নয়, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বাঙ্কার বোমার দরকার।
ডেকার এভেলেথ, একজন কৌশল বিশ্লেষক বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য এখনো পরিষ্কার নয়। তারা হয়তো কমান্ড ব্যবস্থা, বিমানবাহিনী এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে টার্গেট করছে। কিন্তু যদি তাদের মূল লক্ষ্য পারমাণবিক বিস্তার রোধ হয়, তাহলে প্রশ্ন থাকে—এই হামলা তা ঠেকাতে কতটা সফল হবে?