আদালত চত্বরে হাতকড়া খুলে পালাল জিসান হত্যা মামলার আসামি

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়েছে অপহরণের পর হত্যা মামলার এক আসামি।

শরিফুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি স্কুলছাত্র জিসান হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা মামলার আসামি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যান বলে হাজতখানার এসআই মো. রিপন মোল্লা জানান।

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালতে এদিন এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। সেজন্য দুই আসামি শরীফুল ইসলাম এবং শাহিন মণ্ডলকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

পরে তাদের এজলাসে তোলা হয়। সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু।

তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের আদালতের দ্বিতীয় তলা থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে নিচ তলা থেকে পালিয়ে যান শরিফুল ইসলাম।

আদালতের সিসি ক্যামেরা ভিডিওতে দেখা যায়, দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য চার আসামিকে সঙ্গে নিয়ে হাজতখানার দিকে যাচ্ছিলেন। শরিফুল ইসলাম ছিলেন সবার সামনে। তাদের পেছন থেকে দড়ি ধরে হাঁটছিলেন ওই কনস্টেবল।

এভাবে আদালত ভবনের নিচে সিঁড়ির কাছে পৌঁছালে শরিফুল কোনোভাবে হাতকড়া খুলে দৌড় দেন। পরে তিনি পাশের একটা আদালতে যান। সেখানে গিয়ে গায়ের সাদা শার্ট খুলে হাতে নেন। লাল টি-শার্ট পড়া অবস্থায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।

হাজতখানার এসআই রিপন মোল্লা বলেন, “আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে আসার পথে কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে আঘাত করে সে পালিয়ে যায়।”

শরিফুল দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদ খানের ছেলে।

ডিএমপির প্রসিকিউশন পুলিশের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, “আসামির হাতে হাতকড়া ছিল। সে ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া লুজ করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলকে হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।”

আসামিকে নিয়ে আসার দায়িত্বে থাকা সেই কনস্টেবল শহিদুল্লাহর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার মাথায় এখন কিছু কাজ করছে না। পরে সবকিছু আপনাদের জানাব।”

২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি দুপুরে খিলগাঁও থানাধীন সিপাহীবাগে এক আত্মীয়র বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিল জিসান হোসেন। এরপর আর বাসায় ফেরেনি সে। পরিবার খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি।

পরদিন ভোর রাত ৪টার দিকে জিসানের মোবাইল থেকে তার বাবা মোফাজ্জল হোসেনের মোবাইলে বার্তা আসে, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ৩০ মিনিট পর ফোন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয় জিসানের মুক্তির জন্য।

এ ঘটনায় মোফাজ্জল হোসেন খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৩ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খবর পান, জিসানের বয়সী একটা ছেলের লাশ ঢাকা মেডিকেলে পড়ে আছে।

সেখানে গিয়ে তিনি ছেলের লাশ সনাক্ত করেন। জানতে পারেন, বাড্ডা থানা পুলিশ আফতাব নগরের আলমগীরের মাছের খামারের মধ্যে জিসানের দেহ চারটি ইট, মাফলার দিয়ে কোমরের সাথে বাঁধা অবস্থায় পায়।

পরে র‌্যাব জিসান হত্যায় জড়িত সন্দেহে শাহিন মিয়া ও শরিফুল ইসলামকে আটক করে। র‌্যাবের কাছে তারা স্বীকার করেন, ১৯ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জিসানকে ফুঁসলিয়ে সিপাহীবাগ নতুন রাস্তা রিকশা গ্যারেজ থেকে অপহরণ করে আফতাব নগরে আলমগীরের মাছের খামারে নিয়ে যান। সেখানে তারা জিসানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন এবং লাশ গুম করতে জিসানের কোমরের সঙ্গে মাফলার দিয়ে চারটি ইট বেঁধে পানিতে ফেলে দেন।

এ ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি মোফাজ্জল হোসেন খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি খিলগাঁও থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ রাহাৎ খান দুইজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু হয়। মামলার ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।