ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি

‘অবৈধ বহিষ্কারাদেশ’ প্রত্যাহার, ‘দমনমূলক’ সিন্ডিকেটের জবাবদিহি এবং শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশের দাবিতে ঢাকার নতুনবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তারা ‘নতুনবাজার ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করলে সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান জানান, শিক্ষার্থীরা সড়কের একপাশে অবস্থান নিয়েছেন, ফলে কুড়িল থেকে বাড্ডাগামী সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, অপরদিকে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ চেষ্টা করছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এসে কথা বলছেন।

প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের বলতে শোনা যায়—
‘হয় বহিষ্কার বাদ যাবে, না হয় আমার লাশ যাবে’;
‘প্রত্যাহার বহিষ্কার, তারপর হবে সংস্কার’;
‘অথরিটি স্বৈরাচার, এবার তোরা গদি ছাড়’;
‘প্রাইভেট খাতে শিক্ষাকর, করতে হবে প্রত্যাহার’;
‘প্রাইভেট সব মাঠে থাক, সিন্ডিকেট নিপাত যাক’ ইত্যাদি।

তাদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারা অবস্থান ধরে রাখেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ দাবি করেন, পুলিশের লাঠিচার্জে ৪-৫ জন ছাত্রীসহ ৮-৯ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ইউআইইউ রিফর্ম আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা নাটকীয়তা ও বিলম্বের মধ্যেও তারা ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও কার্যকর কোনো সমাধান না আসায় তারা ‘আরেকটি জুলাই’ আসার আগেই রাজপথে নেমেছেন।

আন্দোলনকারীদের একজন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাবিব মুহান্নাদ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি বহিষ্কার করেছে। ইউনাইটেড গ্রুপ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনকে অর্থ দিতো, তারা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীরা অধিকার রক্ষায় আন্দোলনে নামে। আশ্বাস দিয়ে তাদের আট মাস বসিয়ে রাখা হয়। পরে ভিসি পদত্যাগসহ অন্য দাবিতে তারা ফের আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলন দমন করতেই ২৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চাই।”

গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইউআইইউ থেকে উপাচার্য, ২৪ জন ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরপর গত ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে, তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছেন।

গত ২ জুন ৪১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ী এবং ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বাকি একজনকে সতর্কবার্তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।