রাষ্ট্রদ্রোহ ও জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা আদালতে জবানবন্দি দিচ্ছেন।
দুই দফায় আট দিনের রিমান্ড শেষে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করেন। এসময় তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
পরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করছেন বলে জানান আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই রফিকুল ইসলাম।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত ২২ জুন শেরে বাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়।
এছাড়া মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার দিনই নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। পরে ২৭ জুন আরও চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ‘গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম, খুন ও নির্যাতনের’ মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে রাখা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, “সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সত্ত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভোটের কাজ সম্পন্ন করা এবং জনগণের ভোট না পেয়েও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা—সবই দণ্ডনীয় অপরাধ।”
ঘটনার সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ভোট কেন্দ্র এলাকার ভোটার, ভোট দিতে না পারা ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। ব্যালট পেপারে সিল ও স্বাক্ষর থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেও তদন্তে সত্য উদঘাটিত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। নূরুল হুদার পর সাবেক আরেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।