শেয়ার ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ: বসুন্ধরা চেয়ারম্যানসহ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে

ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন।

দুদক তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি দখল, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে এ আদেশ চেয়েছিল। সংস্থাটি এসব অভিযোগের অনুসন্ধানও করছে।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সাত সদস্যের নামে থাকা ৭০টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও ১০ হাজার ৫৩৮ ডলার এবং ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ৩০২টি শেয়ার (যার মূল্য ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা) অবরুদ্ধের আদেশ এসেছে।

চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরা হলেন- ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান ও তার স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর), ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান ও তার স্ত্রী ইয়াশা সোবহান।

দুদকের সহকারী পরিচালক সাজিদ উর রহমান আদালতে এ আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবর দখল, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন।

তারা স্লোভাকিয়া ও সাইপ্রাসে নাগরিকত্ব গ্রহণে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া করা হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসসহ বিভিন্ন দেশে একাধিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ, সাইপ্রাসে বাড়ি কেনা এবং হাবিব ব্যাংক লিমিটেড (সংযুক্ত আরব আমিরাত) ও ইউরো ব্যাংকে অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযোগে বলা হয়, এসব বিনিয়োগ ও সম্পত্তি কেনা হয়েছে সরকারের অনুমতি ছাড়া এবং বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া তারা বিদেশে সম্পদ অর্জনের তথ্য আয়কর বিবরণীতে প্রকাশ না করে গোপন করেছেন।

দুদক জানায়, বিদেশে সম্পদ অর্জনে ‘লেয়ারিং’ কৌশলে অর্থ পাচার করে তা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করা হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ও ২১ নভেম্বর আদালত বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়।

আবেদনে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানে দেখা গেছে তারা বাংলাদেশের ভেতরেও অবৈধ অর্থ দিয়ে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব পরিচালিত হচ্ছে।

আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের মালিকানাধীন শেয়ারের মূল্য ১৫ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং বসুন্ধরা হটিকালচারের শেয়ারের মূল্য ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বসুন্ধরা গ্রুপের নিবন্ধিত ২২টি কোম্পানি ছাড়াও আরও অনেক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুসন্ধান চলছে।

আবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, অভিযুক্তরা এসব শেয়ার ও অর্থ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যা মামলার কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সেগুলো অবরুদ্ধ ও জব্দ করা জরুরি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল বসুন্ধরাসহ পাঁচটি বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাদের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য চায়।

এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের আট সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। একই মাসে দুদকের আবেদনে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিআইডি এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের জমি দখল ও অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *