ঢাকার মিরপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আসিফ শিকদার নামের সাবেক এক ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় তিন সেনা কর্মকর্তা, পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফরহাদ হোসেন নিয়ন জানান, ২৩ জুলাই আসিফ শিকদারের মা স্বপ্না বেগম ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখেন। বুধবার মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- মেজর মুদাব্বির, ক্যাপ্টেন তাম্মাম, সায়েন্সল্যাব সেনা ক্যাম্প ৩০ ফিল্ডের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সিরাজ, পুলিশের মিরপুর ডিভিশনের ডিসি মাকসুদুর রহমান, দারুস সালাম জোনের এডিসি জাকারিয়া, এসি এমদাদুল হক, ওসি শরিফুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান (তদন্ত), আবুল কালাম আজাদ লেলিন, খলিল (ফর্মা খলিল) ও ফরিদ (সিএনজি ফরিদ)।
২০ জুলাই রাত দেড়টার দিকে মিরপুর ১ নম্বর সড়কে আসিফ শিকদারের বাসায় অভিযান চালায় যৌথবাহিনী, এমন দাবি করে তার চাচা হারুন অভিযোগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তার ভাতিজাকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২১ জুলাই ভোরে আসিফের সঙ্গে শাকিল ও সাইফুল নামের আরও দুজনকে আটক করে যৌথবাহিনী। তখন ৩০ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের কথা জানিয়ে পুলিশ জানায়, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
২৬ বছর বয়সী আসিফ শিকদার শাহ আলী থানার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব ছিলেন। তিনি একই ওয়ার্ডের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০ জুলাই রাত দেড়টার দিকে বাসার ফটকে জোরে করাঘাত শুনে আসিফ জেগে ওঠেন এবং পরিবারের অন্যদের জাগান। তার মা স্বপ্না বেগম জানতে চাইলে বলা হয়, শাহ আলী থানার ওসি দরজা খোলার জন্য বলছেন।
রাত ২টার দিকে দরজা খোলামাত্র তাকে ধাক্কা দিয়ে পুলিশ, সেনা ও সাদা পোশাকের প্রায় ২৫/৩০ জনের একটি যৌথ বাহিনী বাসায় প্রবেশ করে। তারা বাসায় তল্লাশি চালাতে শুরু করলে আসিফ কারণ জানতে চান। তখন সেনা ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা তাকে মারধর করেন।
এ সময় ওসি শরিফুল ইসলাম আসিফকে বেঁধে ফেলার নির্দেশ দেন। এরপর তার হাত-পা বেঁধে দফায় দফায় নির্যাতন করা হয় এবং তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলায় বলা হয়েছে, ফজরের কাছাকাছি সময়ে স্বপ্না বেগমের কাছে খবর আসে, আসিফের পরনের কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে, নতুন পোশাক প্রয়োজন। পরিবারের লোকজন পোশাক নিয়ে থানায় যান। স্বপ্না বেগম ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আসামিরা হুমকি দেন, ‘আসিফকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে, তোদের গুলি করা হবে’।
এরপর বেলা ১১টার দিকে আসিফের মৃত্যুর খবর জানা যায়। সেদিন দুপুরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসিফের ময়নাতদন্ত হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান, থানায় আসিফ ছাড়াও শাকিল ও সাইফুলকে ৩০ রাউন্ড গুলিসহ বুঝে পাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তবে আসিফের চাচা হারুন বলেন, আসিফের কাছে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি। সাদা পোশাকে থাকা দুইজন তাকে মারধর করে—এই ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করা হয়েছে।