যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ছয় প্রতিষ্ঠানের ওপর ইরানি পণ্য বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল

ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগে ভারতের অন্তত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো ‘গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে’ ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নিয়েছে এবং ইরানবিষয়ক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, বিশ্বব্যাপী ইরানের ‘ছায়া নৌবহর’ ও মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহন করা হয়, এই নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধেই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, ভারতীয় ছয়টি প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস, জুপিটার ডাই কেম, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম ও কাঞ্চন পলিমার্স।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনসের বিরুদ্ধে, যারা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পণ্য আমদানিতে জড়িত ছিল। গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস কিনেছে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি মিথানলসহ অন্যান্য পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য। জুপিটার ডাই কেম কিনেছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের টলুইনসহ বিভিন্ন রকমের ইরানি রাসায়নিক। রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির অভিযোগ রয়েছে। পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম কিনেছে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য এবং কাঞ্চন পলিমার্স কিনেছে ১৩ লাখ ডলারের ইরানি পলিথিন।

নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং তাদের সঙ্গে মার্কিন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ হবে। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের সহযোগী কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে, যার ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা তাদের হাতে, সেটিও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ইরান এই তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্য থেকে যে রাজস্ব পায়, তা মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ ও অস্থিতিশীলতায় ব্যয় করে।

একই সঙ্গে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনায় ভারতের বিরুদ্ধে ‘দণ্ডমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

এদিকে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (এসডিএন) তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষায়, “এই পদক্ষেপ কাউকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়; বরং আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই এর লক্ষ্য।”