গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে গিয়ে হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যে আটকা পড়া দলটির নেতাদের সাঁজোয়া যানে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দুই সপ্তাহ পর ব্যাখ্যা দিল সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অবশ্যই জীবন রক্ষা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা সেটা করেছি ইতোপূর্বে। কোনো দল নয় বরং জীবন রক্ষার্থেই আমাদের এ কাজটি করতে হয়েছে।”
১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। গুলিতে চারজন নিহত হন, অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।
সংঘর্ষের মধ্যে এনসিপির আটকা পড়া নেতাদের সাঁজোয়া যানে সরিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। সেই ঘটনার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, নিয়ে সমালোচনাও হয়।
সেনাবাহিনী পক্ষপাতদুষ্ট কি না—এমন প্রশ্নে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “কোনো দলকে উদ্দেশ্য করে নয়। যাদের জীবন হুমকির মধ্যে বিবেচনায় পড়েছিল তাদেরকে আমরা উদ্ধার করেছি। সেটা দলের পরিচয়ে মুখ্য বিষয় ছিল না। জীবন রক্ষার্থেই এ কাজটি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত করতে চাই সেনাবাহিনী আয়ত্তের ভেতরে আছে, কাছাকাছি আছে, সেনাবাহিনীর দায়িত্বের ভেতরে আছে, ওই সময় কারও জীবন বিপন্ন হলে আমি মনে করি না আমরা চুপ করে বসে থাকব। যে কারও বেলায় আমাদের অবস্থান একইরকম থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী কাউকে মৃত্যুর মুখে রেখে দাঁড়িয়ে থাকবে না। প্রত্যেকটা জীবন তাদের কাছে মূল্যবান। গোপালগঞ্জের ঘটনা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঘটনার তদন্তে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোন প্রেক্ষাপটে ঘটেছে এবং কেন সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছিল, সে বিষয়ে তদন্ত করবে এই কমিটি। আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করি।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মেজর সাদিক’ নামে এক সেনা কর্মকর্তার আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “মেজর সাদিকের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তিনি সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন। তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হলে প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর বেশি এই মুহূর্তে বলা সমীচীন নয়।”
‘কেএনএফ এখন অন্তত নাজুক অবস্থায়’
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন গোষ্ঠীর আধিপত্য নিয়ে প্রশ্নে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ইউপিডিএফ, জেএসএসের মতো দলগুলো আধিপত্য ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সময় সময় সংঘর্ষে জড়ায়। সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী একাই পার্বত্য অঞ্চলের স্টেকহোল্ডার নয়—বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশও এর অংশ। সবাই মিলে কাজ করলে পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
কেএনএফ ও আরাকান আর্মির যোগসূত্র নিয়ে তিনি বলেন, তাদের গোত্রীয় ও মানসিক মিল থাকায় এ ধরনের সংযোগ অস্বাভাবিক নয়। কেএনএফ যদি অস্ত্র পায়, তাতেও বিস্ময়ের কিছু নেই।
তবে তিনি জানান, কেএনএফ এখন আর কোনো অবস্থাতেই আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে না, বরং তারা এখন নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর অভিযানে তাদের অনেক সদস্য হতাহত হয়েছে, অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, ট্রেনিং ক্যাম্প ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সম্মিলিতভাবে কাজ করলে কেএনএফকে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব, এবং সেটা অবশ্যই প্রয়োজন।