গুলশানে ৫০ লাখ চাঁদা দাবির ঘটনায় পলাতক অপু গ্রেপ্তার, রিয়াদের ঘরে মিলেছে কোটি টাকার চেক ও নগদ টাকা

গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপুকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মো. তালেবুর রহমান।

তালেবুর রহমান জানান, “অপু ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন। তিনি দুই নামই ব্যবহার করতেন। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।”

এর আগে একই মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

গত শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২ নম্বরের একটি বাসায় চাঁদা নিতে গিয়ে পুলিশ ওই পাঁচজনকে আটক করে। বাসাটি সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক মুন্না, সদস্য সিয়াম ও সাদাবকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে সংগঠনটি। পাশাপাশি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারকৃত রিয়াদের পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে চারটি প্রাপকের নাম ও তারিখবিহীন চেক উদ্ধার করে পুলিশ, যার মোট মূল্য সোয়া দুই কোটি টাকা। এসব চেক ‘ট্রেড জোন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইস্যু করা বলে জানায় পুলিশ। চেকগুলোর মধ্যে দুটি এক কোটি, একটি ১৫ লাখ এবং অন্যটি ১০ লাখ টাকার।

এছাড়া রিয়াদের বাড্ডার আরেকটি ভাড়া বাসা থেকে আরও ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, এই অর্থ গুলশানের সাবেক এমপির বাসা থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকার চাঁদার অংশ।

ওসি বলেন, “রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় রিয়াদ স্বীকার করেছে, বাড্ডায় তার একটি ভাড়া বাসা আছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে ওই অর্থ উদ্ধার হয়।”

গুলশান থানার মামলায় অপু দ্বিতীয় আসামি। অপু ও রিয়াদ সম্পর্কে পুলিশ জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা মিলে একটি ‘গ্রুপ’ তৈরি করে চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং ‘মব সন্ত্রাসের’ ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করছিল। একপর্যায়ে সেটাই তাদের ‘পেশা’ হয়ে দাঁড়ায়।

ওসি বলেন, “সাবেক সংসদ সদস্যের বাসা থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগে পেয়েছিল রিয়াদ। বাকি টাকা ভাগ করে নেয় অপুসহ অন্যরা।”

পুলিশ আরও জানায়, বাড্ডার তিন কক্ষের বাসায় রিয়াদ একা থাকতেন একটি রুমে, আর অন্য কক্ষে ৪/৫ জন ভাড়াটিয়া থাকতেন। রিয়াদের রুমটি ‘আধুনিক’ আসবাব ও দামি পোশাকে ভর্তি ছিল, যা তার আগের বাসাগুলোতে পাওয়া যায়নি।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় এসব তথ্যের সূত্র ধরেই দ্বিতীয় বাসার সন্ধান মেলে।