যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ‘সন্তোষজনক’ অবস্থানে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে তার মতে, দেশের পোশাক রপ্তানি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারে না।
শুক্রবার দুপুরে গুলশানের নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “এটা জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় না। যে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিযোগিতায় আমরা তুলনামূলকভাবে একটা সন্তোষজনক অবস্থানে আছি। আমরা ২০%, পাকিস্তান ১৯%, ভিয়েতনাম ২০%, ভারত ২৫%। সেই ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে ট্যারিফের ফিগারটা সন্তোষজনক।”
তিনি জানান, শুধুমাত্র শুল্ক হার জানা গেলেও, পুরো বাণিজ্য আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ হওয়া দরকার। “পুরো নেগোসিয়েশনের সার্বিক বিষয়টা তো আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু ট্যারিফের বিষয়টা জানি। এর বিপরীতে আর কী দিতে হয়েছে সেটা না জানা পর্যন্ত তো এর ইমপেক্টটা কী হবে, সেটা আমরা বলতে পারছি না।”
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শতাধিক দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তাতে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১ আগস্ট থেকে।
পরবর্তীতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে ১১০টি পণ্যে আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। তবুও ট্রাম্পের অবস্থান বদলায়নি।
শুল্কের চাপ কমাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন তেল ও তুলা আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এছাড়া মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারক বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বিবৃতিতে জানানো হয়, “শুধু শুল্ক ছাড় নয়, অশুল্ক বাধা, বাণিজ্য ভারসাম্য এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ দূর করতে বাংলাদেশকে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, শুল্ক নির্ধারণ হবে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিশ্রুতির গভীরতার ভিত্তিতে।”
এই প্রেক্ষাপটে আমীর খসরু বলেন, “শুধু ট্যারিফ নয়, এর পেছনে যেসব বিষয় রয়েছে— আমেরিকানরা কী পাঠাতে পারবে, তাদের কী কী দাবি ছিল— এসব প্রকাশ হলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। এটা একটা প্যাকেজ চুক্তি। এই সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক আলাপ-আলোচনা রয়েছে।”
২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কিছু তো করতেই হবে। কারণ পুরো ট্যারিফের বিষয়টাই আমেরিকান পণ্য রপ্তানির স্বার্থে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি বা ব্যবসায়ীরা সেটা কতটা অ্যাবজরভ করতে পারবে, সেটাই আলোচনার বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু ট্যারিফ নয়, এর পেছনের বিষয়গুলো সম্মিলিতভাবে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের রপ্তানিকারকরা আপাতত স্বস্তি পেলেও দীর্ঘমেয়াদে আমাদের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।”
রপ্তানি বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের শুধু আমেরিকা নির্ভরশীল অর্থনীতি হতে পারে না। রপ্তানিটা আরও বেশি ডাইভারসিফাই করতে হবে— দেশে ও বিদেশে। বিনিয়োগ পরিবেশ, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, ড্রিম বিজনেসের মতো খাতগুলোর সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।”
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার গেছে যুক্তরাষ্ট্রে— যা মোট রপ্তানির ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য প্রধান বাজারের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, ইতালি, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। এছাড়া জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক, রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়াও রয়েছে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে।