দীর্ঘসময় অনির্বাচিত সরকার থাকলে দেশে নানা সমস্যা তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে, যার ভোট সে যেন নিজে দিতে পারে এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটা প্রতিষ্ঠিত সরকার গঠন করতে পারে তার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করছি। আমরা উনার কাছে (মুহাম্মদ ইউনূস) এটাই আশা করি যে, আপনি এমন একটা ভোটের ব্যবস্থা করে দেন যাতে মানুষ বলতে পারে দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমরা এমন একটা ভোট দেখতে পেরেছি—আমার ভোটের প্রতি কেউ জোর করতে পারেনি, আমার ভোট কেউ টাকা দিয়ে কিনতে পারেনি, আমি আমার ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সরকার গঠন করতে পেরেছি।”
তিনি বলেন, “এটাও সাথে সাথে ঠিক, একটা অনির্বাচিত সরকার যদি দীর্ঘ সময় থাকে এটা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।”
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চাওয়া হয়। এরপর সেই মতামতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ১১২টিতে একমত, ২৬টিতে একমত নয় এবং ২৮টিতে আংশিক একমত হয়েছে বলে জানান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়ে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেখানে আমরা সবগুলোতে একমত হয়েছি। দেশ গঠনের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো সহযোগিতায় আমরা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় অবশ্যই অংশ নেব।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এতে অংশ নেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে এদিনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জাতীয় সনদ তৈরি করতে কমিশনকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই চেষ্টায় আমরা আপনাদের (জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট) সহযোগিতা পেয়েছি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছি। সুনির্দিষ্ট ছয় মাসের মধ্যে আমরা জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই।”
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্বাভাবিক উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, “আমাদের এক জায়গায় আসতে হবে। এর অর্থ এ নয় যে, সব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব। কিন্তু যেগুলো রাষ্ট্র বিনির্মাণে, পুনর্গঠনে প্রয়োজন, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা তৈরির জন্য জরুরি, সেখানে আমরা একমত হতে পারব বলে আশা করি। সেটাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেষ্টা। সরকার বা কমিশনের কোনো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নেই, আমাদের লক্ষ্য হলো সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করা।”