চিকিৎসকদের নিয়ে মন্তব্যে সমালোচনার মুখে আইন উপদেষ্টা, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল

চিকিৎসকদের নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বক্তব্য প্রত্যাহার ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে। সমালোচনার প্রেক্ষিতে রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আইন উপদেষ্টা চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন— “চিকিৎসকরা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল? দেশে বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের?”

এই বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব, জামায়াতপন্থী এনডিএফ ও এনসিপি রবিবার বিবৃতি দেয়। একই দিনে বিপিএইচসিডিওএ তাদের সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক এ এম শামীম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলেন, আইন উপদেষ্টার বক্তব্য চিকিৎসকদের সততা, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগকে হেয় করেছে এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি জনআস্থা ক্ষুণ্ন করেছে। তারা বক্তব্য পুনর্বিবেচনা ও ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গুর মতো মহামারিতে সেবা দিয়েছেন, এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ও আহতদের চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এসব আত্মত্যাগের পরও আইন উপদেষ্টার মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়।

অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) আলাদা বিবৃতিতে আসিফ নজরুলকে অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। তা না হলে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ১৮ আগস্ট এক দিনের জন্য প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

এদিকে আসিফ নজরুল রবিবার রাতে ফেসবুক পোস্টে বলেন, তার বক্তব্য আংশিকভাবে প্রচার করায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা দেন, “প্রথমে রোগী হিসেবে আমার ভালো অভিজ্ঞতার কথা বলেছি। এরপর অন্যদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু সমালোচনা তুলে ধরেছি। তবে বলেছি, এসব অভিযোগ সব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নয়, বরং একশ্রেণির চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।”

তিনি আরও লিখেন, “আমার বক্তব্য যেভাবে কিছু পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে, তাতে মনে হতে পারে অভিযোগগুলো সব চিকিৎসকদের উদ্দেশে করা। কিন্তু এটি ঠিক নয়। প্রচণ্ড ত্যাগ, সততা ও দক্ষতা নিয়ে বিপুলসংখ্যক ডাক্তার রোগীদের সেবা করেন। তাঁদের কাছে এটি কষ্টের কারণ হতে পারে। তাই এমন ডাক্তারদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

তবে কিছু চিকিৎসকের ক্ষেত্রে অভিযোগ সত্য হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা সংখ্যায় কম হতে পারেন। এসব অভিযোগ সত্যি কি না, তা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।”