আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে

  • নতুন শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থান ও সাম্প্রতিক নির্বাচন ইতিহাস

অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। সেখানে ‘গণহত্যাকারী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম যুক্ত হবে’।

বৃহস্পতিবার বিকালে নিজের ফেইসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের সংগ্রামের গল্প পৌঁছে দিতে পাঠ্যপুস্তকে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক চারটি জাতীয় নির্বাচনের তথ্য।”

একই সঙ্গে তিনি একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। সেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির সঙ্গে লেখা রয়েছে, “বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে গণহত্যাকারী হিসেবে যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম।”

  • গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের গণআন্দোলনের ইতিহাসে জোর কদমে ঢুকে যাওয়া জুলাই-অগাস্ট গণআন্দোলনের ইতিহাস এ বছরের শিক্ষাবর্ষের নতুন বইগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক একই অধ্যায়ে লেখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার কথাও।

ইতিহাসের বাঁকবদলের এমন ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়েছে আগের শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পরিমার্জিত ও পরিবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইগুলোতে। নতুন বইতে উঠে এসেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দেড় দশকের সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের নিয়ে রচিত ‘শহীদদের বীরত্বগাঁথা’।

বাদ পড়েছে আন্দোলনের জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বাণী ও ছবি। যুক্ত হয়েছে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের গ্রাফিতি।

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের বইতে এসব পরিবর্তনের মধ্যে শিশু-কিশোরদের জন্য ইতিহাস শেখাতে তুলে ধরা হয়েছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান কান্ডারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ। নতুন করে ফিরে এসেছে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা।

  • জুলাই অভ্যুত্থানে সরকারের পট পরিবর্তনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পার হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’ বলে ঘোষণা দেয় গত ১ সেপ্টেম্বর।

ফলে বছরের শেষাংশে এসে চলতি বছরের জন্য এক যুগ আগের ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই পাঠ্যবইগুলোর ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’, ‘ইতিহাসের বিকৃতি’, ‘অতিমাত্রায় ব্যক্তি তোষণ’, ‘বিষয়বস্তুতে অসত্য তথ্য’, ‘কাউকে সরিয়ে ফেলার ব্যাপার’ সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়।

  • তখন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছিল, আগামী বছর পাঠ্যপুস্তকে নতুন শিক্ষাক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তবে গেল ৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, ২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিকে পরিমার্জন করে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করবে সরকার। প্রথম বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা চালু করা হবে, এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু হবে।

তিনি বলেন, “সময়স্বল্পতার কারণে ২০২৬ সালের বই চলমান বছরের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ছাপানো হবে এবং এতে যেসব সাধারণ ভুলভ্রান্তি ছিল সেগুলো ঠিক করে আগামী বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই হাতে পাবে তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”