ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইসির কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। দুই ডজন কাজের পরিকল্পনার মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টিও রয়েছে।

ভোটের দিন ও তফসিলের তারিখ নির্ধারণ না করা হলেও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট ধরে সাজানো হয়েছে পরিকল্পনা। সংলাপ, মতবিনিময়, মিটিং, ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ, মুদ্রণ, বাজেট বরাদ্দ, আইটি প্রস্তুতি, প্রচারণা, সমন্বয় সেল, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে যাবতীয় কর্মপরিকল্পনা মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্য খাত ও বাস্তবায়নসূচি রোডম্যাপে স্থান পেয়েছে।

বুধবার এই পরিকল্পনা অনুমোদন করে ইসি। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মপরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

তফসিল কবে এবং ভোট কবে হবে—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল দেব। আমাদেরকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে আগামী রমজানের আগে ভোট করার জন্য। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান শুরু। আবার রমজান তো চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। এভাবে আপনি নির্বাচনের তারিখ বের করতে পারেন।”

গণপরিষদ ও গণভোটের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা জাতীয় নির্বাচনের জন্য, সংসদ নির্বাচনের বাইরে আমাদের অন্য কোনো কিছু ভাববার সুযোগ নেই।”

কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো:

  • অংশীজনের সংলাপ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনী আইন-বিধি সংস্কার, দল নিবন্ধন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, পোস্টাল ভোটিং, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক অনুমোদন।
  • নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম।
  • অন্যান্য আইন-বিধি সংস্কার ও একীভূতকরণ; ম্যানুয়াল, নির্দেশিকা, পোস্টার, পরিচয়পত্র মুদ্রণ।
  • প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স উপযোগীকরণ, নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দ।
  • প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন।
  • বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচার, ফলাফল প্রদর্শন, প্রকাশ ও প্রচার।

বিশেষ কর্মসূচি:

  • দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ সেপ্টেম্বরে শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে দেড় মাস চলবে।
  • ভোটার তালিকা হালনাগাদ: দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে, যা চূড়ান্ত হবে ৩১ আগস্ট। ৩১ অক্টোবরের সম্পূরক তালিকা শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ নভেম্বর।
  • নির্বাচনী আইন-বিধি: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও অন্যান্য আইন-বিধি ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশোধনের প্রস্তাব ও প্রণয়ন। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন, ভোটার তালিকা আইন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, নির্বাচন পরিচালনা আইন ২০২৫, নির্বাচন কর্মকর্তা আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ সংশোধন আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন, যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা করছে ইসি।
  • রাজনৈতিক দল নিবন্ধন: মধ্য সেপ্টেম্বর প্রাথমিক নিবন্ধন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন।
  • সীমানা নির্ধারণ: সেপ্টেম্বরের শুরুতে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিআইএস ম্যাপ প্রকাশ।
  • পোস্টাল ভোটিং ও ব্যালট: প্রকল্প অনুমোদন, সফটওয়্যার চূড়ান্ত, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, নিবন্ধন ও প্র্যাক্টিসিং মডিউল, প্রচারের কাজ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন। প্রবাসে নভেম্বরে ব্যালট পেপার পাঠানো, কারাবন্দিদের জন্য ভোটের দুই সপ্তাহ আগে ব্যালট পাঠানো।
  • আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম: সেপ্টেম্বরে বৈঠক, তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে ও পরে বৈঠক।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সংক্রান্ত চিঠিও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারও জানিয়েছেন, ভোটের তারিখের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের সভায় আলোচনা শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।